এবারও আদালতে হাজির হননি সাবেক এমপি বদি
উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে নিজের বাবা দাবি করে টেকনাফের এক যুবক কর্তৃক দায়ের মামলায় জারি করা সমনের নোটিশ পাননি উল্লেখ করে এবারও আদালতে হাজির হননি আবদুর রহমান বদি।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আবদুর রহমান বদিকে বাবা দাবি করে দায়ের করা মামলায় ১৪ জানুয়ারি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সাবেক সাংসদ বদিকে জবানবন্দি দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু সমনের নোটিশ পাননি দাবি করে নির্ধারিত দিনে আবদুর রহমান বদি আদালতে উপস্থিত হননি। তখন আদালত ১৪ মার্চ পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে। সেই দিনও একই অভিযোগ উত্থাপন করে এবারও আদালতে উপস্থিত হননি সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি।
একারণে ইমেইল যোগে সমনের নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারি জজ জিয়াউল হক এ আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. নাজিম উদ্দিন।
তিনি উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়ার ২৭ বছর বয়সী যুবক মোহাম্মদ ইসহাক কক্সবাজার-৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে নিজের পিতা দাবি করে টেকনাফের সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বদি ছাড়াও মূল-বিবাদী করা হয়েছে বদির চাচা টেকনাফের পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে।
ওইদিন মামলাটি আমলে নিয়ে মূল-বিবাদী আব্দুর রহমান বদিসহ বিবাদীদের ১৪ জানুয়ারি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন বিচারক। সেইদিন সমনের নোটিশ পাননি দাবি করে আদালতে উপস্থিত হননি বদি। এরপর আদালত ১৪ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করে। এবারও একই কারণ দেখিয়ে উপস্থিত হননি তিনি। একারণে, তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় ই-মেইলে সমন পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
এদিকে, মামলার আসামি আবদু রহমান বদি আদালতে উপস্থিত না হলেও উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদী মো. ইসহাক ও তার মা, বদির প্রথম স্ত্রী দাবিদার সুফিয়া খাতুন।
মামলার বাদি মোহাম্মদ ইসহাক সাংবাদিকদের বলেন, তাকে ছেলে হিসেবে স্বীকার করার ভয়ে কৌশলে আবদুর রহমান বদি নোটিশ গ্রহণ করছেন না।
নোটিশটি জারিকারক তার বাড়িতে টাঙিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের হাতে নোটিশের কপি দেয়া হয়েছে। কৌশলে মামলা বিলম্ব করতে এমন আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বদির ছেলে দাবিদার ইসহাক।
তবে এ বিষয়ে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কয়েকবার কল করা হলেও বদি ফোন রিসিভ করেননি।
মোহাম্মদ ইসহাক আরো বলেন, "মামলা দায়েরের পর থেকে আমি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। এরপরও আমার বাবাকে সামনাসামনি দেখবো বলে বুকভরা আশা নিয়ে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমার বাবা সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি সাহেব আদালতে আসবেন। কিন্তু তিনি এবারও হতাশ করেছেন,"
তিনি আরও বলেন, "ওনার কাছ থেকে আমি সহায়-সম্পদ চাই না। আমি শুধু আমার পিতৃ পরিচয় ও পিতার অধিকার চাই। আমি জন্মদাতাকে (বদিকে) বাবা ডেকে মনের হতাশা দূর করতে চাই।"
মোহাম্মদ ইসহাক তার মামলায় দাবি করেন, গত ৩০ বছর আগে টেকনাফ পৌরসভার ইসলামাবাদ ধুমপাড়ার বাসিন্দা আবুল বশরের মেয়ে সুফিয়া খাতুনকে সাবেক সংসদ সদস্য বদি গোপনে বিয়ে করেন। গর্ভবতী হওয়ার খবর জানতে পেরে তাকে হত্যার চেষ্টা চালান বদি। তাতে সফল না হয়ে সুফিয়াকে স্থানীয় এক রাজ মিস্ত্রীর সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। এসময় সুফিয়ার গর্ভবতী হওার কথা গোপন রাখা হয়। পরে জানতে পেরে সেই স্বামী সব মেনে নিয়ে সংসার করেন। এরপরও বাচ্চাসহ সুফিয়াকে হত্যার চেষ্টা করতো বদির পরিবার। এজন্য তারা প্রায় সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে জীবন ধারণ করে। সেই সূত্রেই বদির প্রথম ছেলে তিনি।
এসব বিষয় উল্লেখ করে সুফিয়া সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তাদের দাবি ইসহাক বদির সন্তান, তাকে যেন মেনে নিয়ে সন্তানের মর্যাদা দেওয়া হয়। বাদী ও তার মায়ের দাবি অনুসারে আব্দুর রহমান বদির প্রথম সন্তান ইসহাক।
স্থানীয় বোদ্ধামলও বলছে, সন্তানের বাবা কে? তা নির্ধারণ করতে পারেন কেবল তার মা। যেহেতু ইসহাকের মা-ই প্রকাশ্যে বলছেন ইসহাকের বাবা টেকনাফের এজহার মিয়া কোম্পানির ছেলে আবদুর রহমান বদি, সেখানে ডিএনএ টেস্ট করালেই তার সত্যতা জানা যাবে। এছাড়াও মামলার বাদি ইসহাকের দৈহিক গড়ন, অবয়ব এবং বাচনভঙ্গি সবই আবদুর রহমান বদির আচরণের সাথে মিলে যায়।