এলডিসি থেকে বের হওয়ার আগেই এপিআইতে উৎপাদনে যাবে বাংলাদেশ
- দেশে ওষুধের বাজার ২৫ হাজার কোটি টাকা
- ৯৮% স্থানীয় কোম্পানির দখলে
- ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি ১২০০ কোটি টাকা
- ৯৭% কাঁচামালই আমদানি করতে হয় বিভিন্ন দেশ থেকে
- বছরে আমদানি করতে হয় ৫০০০ কোটি টাকার কাঁচামাল
- এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে
- মুন্সীগঞ্জে ২০০ একর জমিতে হচ্ছে এপিআই শিল্প পার্ক
- ২০২২ সালের জুনে উৎপাদন শুরু করবে একমি
এলডিসি গ্রাজুয়েশন করার পর ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান মেধাস্বত্ত্ব ফি বেড়ে যাবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলে ব্যয় বেড়ে ওষুধ শিল্প সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেজ্ঞরা।
তবে এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশনের আগেই এপিআই শিল্প পার্কে উৎপাদন শুরু করে নিজেরা কাঁচামালের যোগান দিয়ে সংকট উত্তরণ করতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২১ সালের জুনের মধ্যে ওষুধ শিল্প পার্কের সব অবকাঠামো শেষ করে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ শহিদুল ইসলাম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, ২৭টি কোম্পানি কারখানার স্থাপনের জন্য প্লট বরাদ্দ নিয়েছে। এর মধ্যে একমি ও হেল্থ কেয়ার কারখানা নির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে এসব কারখানায় উৎপাদন শুরু করা যাবে।
ওষুধ শিল্প পার্কের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ শহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, চলতি বছরের জুনের মধ্যেই আমাদের সব অবকাঠামো শেষ হবে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইপিটি) একটি অংশের কাজও এই সময়ের মধ্যে শেষ হবে। বরাদ্দ নেয়া কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে জুনের পরই শিল্পপার্কে কাঁচামাল উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
হেলথকেয়ার এবং এসিআই লিমিটেডের কারখানার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে জানিয়ে এ কমর্কর্তা বলেন, কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অবকাঠামো সম্পন্ন, মেশিনারিজ আমদানিসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করতে আরো এক বছর লেগে যেতে পারে।
২০২২ সালের জুনে উৎপাদন শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও। একমি ল্যাবলেটরিজের কোম্পানি সেক্রেটারি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ভবন নির্মাণের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ক্যাপিটাল মেশিনারিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আরো কিছুদিন লাগবে। তবে ২০২২ সালের জুনে উৎপাদন শুরু করতে পারবো।
সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) ২৬ ফেব্রুয়ারি এ সুপারিশ করেছে। সুপারিশ অনুযায়ী ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে চূড়ান্ত গ্রাজুয়েশন করবে।
এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে বর্তমানে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে হয় না। গরীবদেশে ওষুধের মুল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে এ সুবিধা দিচ্ছে এপিআই উৎপাদক দেশগুলো। আর এ সুবিধায় বাংলাদেশের ওষুধশিল্প একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বছরে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার ছাড়িয়েছে দেশের ওষুধ শিল্পের বাজার। রফতানিও হচ্ছে ১২০০ কোটি টাকার বেশি। তবে ওষুধু শিল্পের কাঁচামালের ৯৭ শতাংশই উন্মুক্ত প্যাটেন্ট সুবিধায় আমদানি করছে বাংলাদেশ।
বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এই সুবিধা শেষ হয়ে যাবে। আর এ সুবিধা শেষ হলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প পিছিয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী ব্যবসায় প্রভাব নিয়ে সিপিডির আলোচনা সভায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন হওয়ার পর আমাদের ওষুধ শিল্প বিপাকে পড়বে। বেশি দামে কাঁচামাল কিনে রফতানি বাজারে টিকতে পারবে না। কারণ হিসাবে এপিআই শিল্পপার্ক এখনো রেডি নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের এপিআই পার্ক রেডি। এখন কোম্পানি চাইলেই উৎপাদনে যেতে পারবে।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া নির্মাণাধীন ওষুধ শিল্প পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, ২০০ একর জমিতে নির্মিত শিল্প পার্কটিতে এরই মধ্যে অবকাঠামো যেমন-উন্নত প্লট, মাটি ভরাট, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনের অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইন, বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, পানি সরবরাহের প্রধান ও সাব লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইপিটি) নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে।
প্রকল্প পরিচারক শহিদুল ইসলাম, এপিআই শিল্প পার্কের বিনিয়োগে ২০৩২ সাল পর্যন্ত আয়কর, ভ্যাটসহ সব ধরনের ট্যাক্স ছাড় দেয়া হয়েছে।
এদিকে স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, একমিসহ মোট ২৭টি কোম্পানিকে এরই মধ্যে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এতে প্রতিটি কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ ১০ একর ও সর্বনিম্ন ৫ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে বাকী কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ কমে যাবে।