কক্সবাজারের সৈকতে ভেসে আসল বিশালাকার নিথর তিমি
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের রামুর হিমছড়ি পয়েন্টে ভেসে এসেছে নিথর দেহে গলিত বিশালাকার এক তিমি।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বেলা ১টার দিকে জোয়ারের পানিতে ভেসে বালিয়াড়িতে আটকা পড়ে তিমির মৃত দেহটি।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন, বনবিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থলে যান রাজনৈনিক নেতৃবৃন্দসহ উৎসুক হাজারো জনতা। বিকেলের জোয়ারে আবারো ভেসে যাওয়া রোধে মৃতদেহটি তীরে তুলতে চেষ্টা চালায় প্রশাসন। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে আসেন ভেটেনারি সার্জনগণ।
রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ জানান, "আমার ইউনিয়নের অংশ পর্যটনস্পট হিমছড়ির বড়ছরার পূর্বাংশে শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে বিশালাকার তিমিটি জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে। বেলা ১টার দিকে ভাটার সময় এটি সৈকতের বালিয়াড়িতে আটকা পড়ে। তিমিটির ওজন প্রায় তিন টন হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলেরা। এটি লম্বায় প্রায় ৪৫ ফুট ও চওড়া ১০ ফুট। প্রাণীটির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পঁচে পানিতে ভেসে যাচ্ছে এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খবর পেয়ে রামুর ইউএনও প্রণয় চাকমা, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আল পরভেজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামুন আল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।"
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর কুমার সাহা বলেন, "দক্ষিণ বনবিভাগের পর্যটন স্পট হিমছড়ি সৈকতে একটি বিশাল সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসার খবর পেয়ে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও-দক্ষিণ) হুমায়ন কবিরের নেতৃত্বে বনকর্মী ও হিমছড়ি পর্যটনস্পট পরিচালকরা ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে আসেন। মৃত তিমিটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে তিমিটির নিথর দেহ মাটিচাপা দেয়া হবে।"
তিনি আরো বলেন, "ধারণা করা হচ্ছে আরো কয়েকদিন আগে তিমিটি মারা গেছে। তবে কি কারণে মারা গেছে সেটি ময়নাতদন্তের পর জানা যেতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মৃত তিমিটি পুনরায় জোয়ারে ভেসে যাওয়া থেকে আটকাতে প্রচেষ্টা চলে। বিকেল ৪টা হতে এ প্রচেষ্টা শুরু হয়। ভাটা পড়ে গেলে বালিয়াড়িতে তিমির দেহটি স্থির হলে ময়নাতদন্ত শুরু হবে। প্রাণী সম্পদ বিভাগের রামু উপজেলার ভেটেনারী সার্জনসহ ওয়াইল্ড লাইফের ভেটেনারী সার্জন সেই অপেক্ষায় ঘটনাস্থলে রয়েছে।"
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম খালেকুজ্জামান বলেন, "এ প্রজাতির তিমি আমাদের বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এসব তিমি চোখে পড়ে। হয়তো তিমিটি মারা যাওয়ার পর ভাসতে ভাসতে কক্সবাজার সৈকতের উপকূলে ভিড়েছে।"
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, "লকডাউনের কারণে সৈকতে লোকসমাগমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু মৃত তিমি ভেসে আসার খবরে হাজারো উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে আসেন। জোয়ারে মৃত তিমিটি ভেসে যেতে চাইলে বনবিভাগ-পুলিশ-বীচকর্মী-স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তীরে আটকে রাখতে চেষ্টা চলে। ভাটার পর রাত হলেও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে এটি দ্রুত সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে।"
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, ১৯৯১ সালে উখিয়ার ইনানী সৈকতে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে হিমছড়ি সৈকতে এভাবে মৃত বিশালাকার তিমি ভেসে এসেছিল বলে তথ্য রয়েছে। ২০২০ সালের লকডাউনের সময়েও সৈকতে ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর মাঝে বেশ কয়েকটি হত্যার শিকার হয়েছিল। এর বছর পার না হতেই আবার বিশাল মৃত তিমি সৈকতে ভেসে এসেছে।