কক্সবাজার বিমান ও স্থলবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার
বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ মোকাবিলায় পর্যটন শহর কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা নেওয়া হয়েছে। আকাশ, নৌ ও স্থলপথে কক্সবাজারে আগতদের পরীক্ষায় বিমান, স্থলবন্দর এবং বাস টার্মিনালে করোনা ভাইরাস শনাক্তে বসানো হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার।
এতে কক্সবাজারে আসা দেশি-বিদেশি সকল যাত্রীকে পরীক্ষা করছেন মেডিকেল টিমের সদস্যরা। নজরদারিতে রাখা হয়েছে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা উপস্থিতির ক্যাম্পগুলোকেও।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্থানীয় প্রতিনিধিকে বলেন, এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। কোনো কারণে পরিস্থিতির অবনতি হলে মোকাবেলা করার জন্য জেলা সদর, রামু ও চকরিয়ায় পৃথকভাবে ১০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শনিবার পর্যটন ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলা সংক্রান্ত পৃথক দুটি সভা করেছেন জেলা প্রশাসক। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সভায় তিনি বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মেনে চলতে সবাইকে অনুরোধ করেন। নিজের পাশাপাশি অপরকেও সচেতন করে কোনো রকম গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এর ব্যতিক্রম হলে রাষ্ট্রের আইনানুসারে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি সাবধান করেন।
সভায় পরিবহন সেক্টরের কর্মচারীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে, বাস টার্মিনালসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্টপেজে করোনা থেকে বাঁচতে করণীয় বিষয়ে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা ও বাসে ভ্রমণকারী যাত্রীদের হাত পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে।
বাস টার্মিনাল, বাস ও কাউন্টারগুলোতে করোনা বিষয়ক সচেতনতার জন্য হটলাইনের নম্বর সম্বলিত পোস্টার লাগানো এবং যাত্রীদের যথাসম্ভব ১ মিটার বা ৩ ফুট দূরে থেকে কথাবার্তা বলাসহ বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া হয় ওই সভায়।
অপরদিকে, পর্যটন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে করা সভায় হোটেল, রেস্তোরাঁ, কীটকট, বীচ বাইকসহ পর্যটনের সকল ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা, হোটেলে আগত পর্যটকদের ভ্রমণ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা, প্রত্যেক সেক্টরের কর্মচারীদের সচেতন করা এবং যথাসম্ভব ৩ ফুট দূরে থেকে কথাবার্তা বলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাজাহান আলি, সহকারি সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, জেলা জাসদের সভাপতি ও পরিবহন নেতা নইমুল হক চৌধরী টুটুল, শামীমুল হক, বিআরটিএ কক্সবাজার অফিসের ইন্সপেক্টর আরিফুল ইসলামসহ পরিবহন ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দর, টেকনাফ স্থলবন্দর ও বাস স্টেশনে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে আগত পর্যটকদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কর্মরত এনজিও-আইএনজিওর স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রমে জড়িতদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। কারও মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ দেখা গেলে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সময়মতো যথাযথ চিকিৎসার আওতায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়। করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় সবখানেই পালা করে ২৪ ঘণ্টা মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার একেএম সাইদুজ্জামান জানান, ১৩টি ফ্লাইটে কক্সবাজারে প্রতিদিন হাজারেরও বেশি যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। আকাশপথে আসা সব যাত্রীকেই থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আফছার উদ্দিন জানান, বন্দরটির ঘাটে বিভিন্ন মালামাল ও পণ্য নিয়ে মিয়ানমারের ট্রলারগুলো আসে। সেখানে মিয়ানমারেরই লোকজন থাকে। তাই বোটে উঠে মালামাল খালাস করা স্থানীয় শ্রমিকদেরও থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করছেন মেডিকেল টিমের সদস্যরা।