করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ইথানল বিতর্ক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সারা বিশ্বে বিজ্ঞানীরা নানা পর্যায়ে গবেষণা করছেন। এসব গবেষণা নিয়ে নানা ধরনের খবর দিচ্ছে গণমাধ্যম। আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও।
এরইমধ্যে সম্প্রতি দেশের কিছু গণমাধ্যমে খবর আসে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক নাকি দাবি করেছেন, ইথানলে সারবে কোভিড-১৯! খবরে বলা হয়, 'শরীরের ভেতরে করোনা ধ্বংসের পদ্ধতিও উদ্ভাবন হয়েছে।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় খবরটি। এ বিষয়ে সত্যতা জানতে সংশ্লিষ্ট গবেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য।
গবেষক অধ্যাপক ড. আলিমুল ইসলাম জানান, তিনি কোভিড-১৯ নিয়ে কোনো গবেষণা করেননি। কিছু কিছু গণমাধ্যমে ভুলভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। জ্বর, সর্দি কাশি ও গলাব্যথা হলে সহজে আরাম পাওয়ার উপায় জানিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তবে যে পরামর্শ তিনি দিয়েছেন, সেটি নিয়ে এখনো ল্যাবরেটরিতে গবেষণার কাজ বাকি।
করোনাভাইরাসসহ সাধারণ ফ্লুর আক্রমনে জ্বর, সর্দি কাশি ও গলাব্যথা হয় মানুষের। এসব শারীরিক কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. আলিমুল ইসলামের পরামর্শ, ইথানল-মিশ্রিত কুসুম গরম পানির কুলকুচি করা বা ভাপ নেওয়া। প্রথমে ফেসবুকে স্টেটাস দিয়ে পরামর্শটি দেন তিনি। পরে কিছু গণমাধ্যমে এটি ফলাও করে প্রচার করা হয়।
এই গবেষক দাবি করেন, তার বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, কোভিড-১৯-এর কোনো প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক উদ্ভাবনের দাবি তিনি করেননি। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়- এমন তথ্য প্রচারণা না করার অনুরোধ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বনামধন্য এই গবেষক।
তিনি জানান, মুরগির করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেছিলেন তিনি। আর অন্যদিকে মানুষকে আক্রমণ করা করোনাভাইরাসটি ভিন্ন প্রকৃতির।
এদিকে ইথানল-মিশ্রিত দ্রবণ দিয়ে ভাপ নেওয়ার যে পরামর্শ গবেষক ড. আলিমুল ইসলাম দিয়েছেন, তার স্বাস্থ্যগত দিক যাচাই করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। জানা গেছে, এই প্রক্রিয়াটি মানুষের জন্য বিপজ্জনক।
ইউনিভারসিটি অব টেক্সাসের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং আন্তর্জাতিক জার্নাল 'জার্নাল অব হ্যাজার্ডাস ম্যাটেরিয়ালস'-এর সম্পাদক নাভিদ সালেহ জানিয়েছেন, যদি ইথানল বাষ্প সেবন করা হয়, তাহলে সেই বাষ্প ফুসফুসে গিয়ে কখনোই ভাইরাস খুঁজে পাবে না। বরং ফুসফুসের কোষকে আক্রান্ত করবে এবং রক্তেও মিশে যাবে। এটি এখন অজানা কিছু নয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েই আছে। তাই ইথানলের এমন ব্যবহার খুবই বিপজ্জনক।