করোনাভাইরাস: চট্টগ্রামে আজ চালু হচ্ছে দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল
বিশ্বব্যাপী মহামারি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের প্রথম একটি অস্থায়ী ৬০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি হয়েছে চট্টগ্রামে।
উদ্যোগ নেয়ার পর মাত্র ২১ দিনের মধ্যেই আজ মঙ্গলবার এই হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এবং রোগী ভর্তি শুরু হচ্ছে।
শহরের নিকটবর্তি সীতাকুণ্ডে করোনা শনাক্তের পরীক্ষাগার ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) কাছাকাছি ফকিরহাট পাক্কার মাথা এলাকায় বেসরকারি একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভবনে নির্মিত হয়েছে হাসপাতালটি। এই হাসপাতালের নামকরণ করা হয়েছে 'চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল' (সিএফএইচ)।
মাত্র ২০ দিনে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে চট্টগ্রামে দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ফৌজদারহাটে প্রস্তুত হওয়ায় ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে মঙ্গলবাল সেবা চালু হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
হাসপাতাল তৈরির উদ্যোক্তা ও চট্টগ্রামের সন্তান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, গত পহেলা এপ্রিল হাসপাতালটি প্রস্তুতের অবকাঠামোর তৈরির কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৫০টি সাধারণ শয্যা, ৫টি ভেন্টিলেটর স্থাপন কাজ শেষ হয়েছে। ১০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) শয্যা স্থাপনের কাজ এখনো শুরু হয়নি। মঙ্গলবার থেকে আমরা রোগী ভর্তি নিব। আউটডোর এবং ইনডোরে সেবা দেওয়া হবে।
রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সর্দি- কাশি-জ্বরসহ করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের ডাক্তার এবং হাসপাতালগুলো ভর্তি নিচ্ছে না। এই ধরনের রোগীরা বিভিন্ন জায়গা অবহেলার শিকার হচ্ছেন। তাই আমরা স্বেচ্ছায় এই ধরনের রোগীদের সেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল গড়ার উদ্যোগ নিই। চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে এ ধরনের রোগীরা সেবা নিবেন। বর্তমানে অবকাঠামোতে ৫০ জন রোগীকে ইনডোরে সেবা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি আউটডোরে যেকোনো রোগী চিকিৎসা নিতে পারবেন। চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টায় সেবা চালু থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ১৫ জন ডাক্তার আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৪০ থেকে ৫০ জন কর্মী এই হাসপাতালে নিয়মিত কাজ করবেন। রোস্টার অনুযায়ী ৩ থেকে ৪ জন ডাক্তার ডিউটিতে থাকবেন। পাশাপাশি নার্স-আয়া-ওয়ার্ডবয়রা রোস্টার অনুযায়ী সেবা দিবেন।
হাসপাতালটি জনগণের অনুদানে পরিচালিত উল্লেখ করে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, হাসপাতালের সবকিছু বিনামূল্যে। রোগীর ওষুধ, থাকা, খাওয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে। কোনো টাকা খরচ হবে না। জরুরি প্রয়োজনের ব্যবহারের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সও রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের পরীক্ষাগার ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) সংলগ্ন ছলিমপুরে শিল্পগ্রুপ নাভানা গ্রুপের একটি ভবনে এই হাসপাতালটি গড়ে উঠেছে। এর আগে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির জন্য নাভানা গ্রুপের ভবনটি উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে ৫টি ভেন্টিলেটর অনুদান দেয় নাভানা গ্রুপ।
নাভানা গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আরাফাতুর রহমান বলেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া চট্টগ্রামে একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেয়। হাসপাতালটিতে তৈরিতে নাভানা গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম নিজেদের একটি ভবন বরাদ্দ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর এ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ফৌজদারহাটে নাভানা গ্রুপের ছয় হাজার ৮০০ বর্গফুটের একটি ভবন ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির জন্য গত ১ এপ্রিল উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে হাসপাতালটি প্রস্তুত হয়েছে। এ ছাড়া নাভানা গ্রুপের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনে যেকোনো সহযোগিতার জন্য উদ্যোক্তাদের জানাতে বলেছি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, গত রোববার আমরা চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। হাসপাতালটি প্রায়ই প্রস্তুত। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই হাসপাতালটি চালু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে সেবা চালু হবে। সেখানে ৫০টি শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। করোনায় চিকিৎসা এই উদ্যোগটি যথাযথ। বেসরকারিভাবে এই ধরনের উদ্যোগ সরকারি হাসপাতালে চাপ কমাবে। আমরা উদ্যোক্তাদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে বলেছি।