করোনা সংকটে নীরবে কাজ করছেন সুয়েল আহমদ
মৌলভীবাজারের কনকপুর এলাকার সুয়েল আহমদ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য তিনি। চলমান করোনাভাইরাসের সংকটে মৌলভীবাজারের যে কয়টি সংগঠন বা ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন তার মধ্যে তিনি অন্যতম।
প্রায় একমাস ধরে শতাধিক পরিবারকে রান্না করা খাবার দিচ্ছেন তিনি। তার নিজের ৪০টি ফ্ল্যাট ও দোকানের দুই মাসের ভাড়াও তিনি মওকুফ করেছেন।
মৌলভীবাজার পৌর এলাকার ভেতরে খাদ্য অভাবে থাকা প্রায় ২০০ কুকুরকে গত একমাস ধরে নিজ উদ্যোগে খাবার খাওয়াচ্ছেন। ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন তিনি। গত বুধবার থেকে পৌর এলাকার অন্তত ১৫০ জনকে প্রতিদিন ইফতার করাচ্ছেন।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছেন পুলিশের পাশেও। মৌলভীবাজার সদর থানা ও শ্রীমঙ্গল থানার সব পুলিশ সদস্যের জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
সুয়েল আহমদের মালিকানাধীন শহরের শান্তিবাগ এলাকার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন মিঠু দত্ত। তিনি বলেন, আমার এপ্রিল মাসের নয় হাজার টাকা ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন সুয়েল ভাই। এ ছাড়া চলতি মাসের ভাড়াও মওকুফ করে দেবেন বলে শুনেছি। আমার পাশের আরও ১৫টি ফ্ল্যাটেরও ভাড়া মওকুফ করেছেন। সর্বমোট ৪০টি ফ্ল্যাট ও বাসার ভাড়া তিনি মওকুফ করেছেন।
মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান আশিক জানান, আমাদের সব পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিউটি করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজারে নেই। সুয়েল আহমদ পুলিশ সদ্যস্যদের হ্যান্ড স্যানিটাজ উপহার দিয়েছেন।
এ দিকে সদর উপজেলার কনকপুর এলাকার ১৪০টি পরিবারের তালিকা করেছেন সুয়েল আহমদ। দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে এমন মানুষদের খুঁজে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের জন্য প্রতিদিনই রান্না করা খাবার প্যাকেট করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তাদেরই একজন মুকিত আহমদ বলেন, ''সুয়েল ভাই আমাদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে আমরা একটু নিশ্চিন্ত থাকতে পেরেছি। আমরা প্রতিদিন রান্না করা খাবার পাচ্ছি।''
চলমান লকডাউনে সবাই যখন মানুষকে নিয়ে ভাবছে তখন কষ্টে আছে মানুষের আশেপাশে থাকা কুকুরগুলোও। হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ থাকায় কুকুরগুলো চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে। গত ৭ এপ্রিল থেকে পৌর এলাকার কুকুরদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি যা প্রাণিপ্রেমিদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও বা বিচ্ছিন্নভাবেও অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। কেউ সাহায্য চাইলে তার বাড়িতে তা পৌছে দিয়ে আসছেন।
সুয়েল আহমদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পৃথিবীতে সব প্রাণীর বাঁচার অধিকার আছে। আমি আমার সাধ্যমত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিপদের এই সময়ে মানুষের পাশে না দাঁড়াতে পারলে নিজেকে অপরাধী মনে হত।"
মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বলেন, বাসা ভাড়া মওকুফের জন্য আমি যে আহ্বান জানিয়েছিলাম তাতে শুরুর দিকে দুইজন সারা দেন তার মধ্যে সুয়েল আহমদ অন্যতম।