কৃষিঋণে জামানতের বিকল্প হিসাবে কৃষি কার্ড বা কৃষি কর্মকর্তাদের প্রত্যয়ন আমলে নেয়ার সুপারিশ
কৃষিঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে; জামানতের পরিবর্তে 'কৃষি কার্ড' বা স্থানীয় পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের 'প্রত্যয়নপত্র'কে আমলে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে, ব্যাংকগুলোর প্রতি অনুরোধ করেছেন জ্যেষ্ঠ কৃষি কর্মকর্তারা।
আজ বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সভায় বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বক্তারা এ অনুরোধ করেন। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএডিসি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, কৃষকের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ-সুবিধা সহজ করতে হবে। তাহলে কৃষির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। ঋণ পাওয়া সহজ করতে জামানতের পরিবর্তে কৃষি কার্ড বা স্থানীয় পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের প্রত্যয়ন আমলে নিতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, কৃষকের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ-সুবিধা সহজ করতে পারলে তাদের চাহিদা পূরণ হবে। ফলে কৃষির পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে।
কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন কার্যক্রম চলছে। যেটি খুব ভাল উদ্যোগ। এই পুষ্টিবাগান স্থাপনে সরকারি সুবিধার বাইরের আগ্রহী কৃষকেরা; যাদের কমপক্ষে ১ শতক জমি আছে- তাদেরকে কৃষি ব্যাংক থেকে জামানত ছাড়াই ৫ হাজার টাকা করে ঋণ দেয়া হবে।
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) কী ভূমিকা পালন করতে পারে- তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় প্রকৃত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের ঋণপ্রাপ্তি সহজলভ্য করতে; ডিএই, বিএডিসি ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি/প্রকল্পের আওতায় যেসব 'কৃষক গ্রুপ' রয়েছে- তাদের সাথে ব্যাংকের সংযোগ বাড়ানো, মাঠ দিবস উদযাপন ও কৃষক প্রশিক্ষণের মডিউলে 'কৃষিঋণ' বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা, স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণে আমন্ত্রণ, দেশে কৃষিঋণের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণে সমীক্ষা পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এদিকে সভায় জানানো হয়, কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০০১ সালে কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা হয়েছে। কিন্তু, ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত মোট ঋণের অনুপাতে কৃষিঋণের পরিমাণ কমেছে। ২০০১ সালে মোট ঋণের ৪.৬৮ শতাংশ ছিল কৃষিতে, যা কমে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২৬ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সুবিধা পান। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাত্র ১২.৫ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সুবিধা পান।