গুজব বা আতঙ্কে ভয় না পেয়ে, যার যখন সুযোগ হবে ভ্যাকসিন নেয়া উচিত: অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণের চার ঘন্টা পর প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, এর ফলে শরীরে কোনো ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তিনি অনুভব করেননি।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন তিনি।
ভ্যাকসিন গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদক তাওছিয়া তাজমীমকে মোবাইলে নিজের অভিজ্ঞতা জানান তিনি।
তিনি বলেন, "আমি ভালো আছি। ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করিনা। খুব কম মানুষের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। আমি জানতাম আমার অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন নেই। আমি আগে থেকেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক পড়াশুনা করেছি, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে সাইড-ইফেক্ট হতে পারে। গতকাল (বুধবার) বিকেলে ইংল্যান্ডে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন নিয়েছেন আমার এক বন্ধু। তিনি সকালে জানিয়েছেন কোন সমস্যা নেই, ভালো আছেন। এ ভ্যাকসিন নেয়া আমার অন্য বন্ধুরাও ভালো আছেন।"
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, "আমার মনে হয় ভ্যাকসিন নেয়াটা একটা সাইকোলজিক্যাল রিলিফ। আমি খুব ভার্নারেবল মানুষ, আমার কো-মর্বিডিটি আছে, দুই বার বাইপাস সার্জারি হয়েছে। গত নয় মাসে আমি বাড়ির বাইরে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মত গাড়ি থেকে নেমেছি আজ (বৃহস্পতিবার)। তবে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হলে আমি এখন থেকে সব প্রটেকশন মেনে বাইরে যাবো।"
তিনি বলেন, "আমাকে অনেক শিক্ষিত মানুষ বলেছেন অন্তত এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বা ভারতের ভ্যাকসিন না নিতে। আমার মনে হয় তাদের ল্যাক অব নজেল আছে। ভ্যাকসিনটি ভারত থেকে এসেছে কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ভারত হলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী দেশ। পশ্চিমা দেশগুলো ভারতেই তাদের পেটেন্টের অনেক ভ্যাকসিন তৈরি করে, কারণ সেখানে সস্তায় বানানো যায়। এই ভ্যাকসিন যারা তৈরি করছে তারা তো পেটেন্টেড। তারা ভ্যাকসিনের মান নিয়ে কোন হেরফের করতে পারবে না। করলে রেপুটেশন প্রবলেম হবে। কাজেই এ নিয়ে সন্দেহ করার কিছু নেই।"
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কীভাবে পেলেন, তা জানাতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, "আমি চেয়েছিলাম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে। সেজন্য কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। তারপর স্বাস্থ্যসচিবের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে প্রথম দিনেই ভ্যাকসিন নিতে যেতে বলা হয়। গতকাল রাতে আমাকে একজন সাংবাদিক বলেছেন আপনি বিএসএমএমইউ কনভেনশন সেন্টারে চলে আসেন হেলথ সেক্রেটারি, বিএসএমএমইউ এর ভিসি, প্রফেসর মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা থাকবেন কোন অসুবিধা হবেনা। সেব্রিনা ফ্লোরা আমার মেয়ের পরিচিত। আমি ভ্যাকসিন নিতে যাওয়ার পর সে সব সময় আমার পাশাপাশি ছিলো। গতকাল রাতে ওই সাংবাদিক আমার এনআইডি নাম্বার নিয়েছে।"
"গাড়িতে করে একাই আমি সাড়ে দশটার দিকে বিএসএমএমইউ এর কনভেনশন সেন্টারে গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছি। ভ্যাকসিন নেয়ার পর কনভেনশন সেন্টারে খুব সুন্দর একটা লাউঞ্জে আমাকে ৩০ মিনিট থাকতে হয়েছে। বিএসএমএমইউ এর প্রো-ভিসি সেখানে আমাদের দেখে গেছেন। যেকোন সমস্যা হলে জানাতে বলেছে। সেখানে বেড ছিলো। তবে আমি বসেই ছিলাম। কারণ আমার তো কোন সমস্যা ছিলোনা।"
তিনি জানান, ভ্যাকসিন নেয়ার পর কোন সমস্যা হলে কোথায় ফোন করতে হবে সেজন্য দুটা ফর্ম আছে।
"আমাকে ভ্যাকসিন নেয়ার ফরম দিয়ে দিয়েছে সেটি পরে দেখাতে হবে। তবে পরের ডোজ কবে দেয়া হবে সেই তারিখটা ওরা দেয়নি। দুই মাস পার বোধ হয় দিবে।"
তিনি বলেন, "এ কোভিড ভ্যাকসিন কতদূর প্রটেকশন দিবে তা এখনো নিশ্চিত না তবে ইন্টারনেটে সার্চ করলেই ক্রেডিবেল ওয়েবসাইট থেকে সব তথ্য পাওয়া যায়। শিক্ষিত লোকেরা এটুকু না করলে তো হবেনা। তা না করে বলছে ইন্ডিয়ান ভ্যাকসিন নেয়া যাবেনা। সরকারের অনেক কিছুই খারাপ থাকতে পারে কিন্তু সবকিছু নিয়ে সন্দেহ করা ঠিক না। ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার ভালো কাজ করছে। বেশ এফিসিয়েন্টলি করছে। সবকিছু খুবই সিস্টেমেটিক। রেকর্ড কিপিং কোয়াইট গুড। আমি সারপ্রাইজ বাংলাদেশে এতো তাড়াতাড়ি এতো ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে পেরেছে। অনেক দেশই এখনো পারেনি।"
ভ্যাকসিন গ্রহণের সময়ে কনসেন্ট পেপারে স্বাক্ষরের বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, "অনেকে কনসেন্ট পেপারে সাইন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। কনসেন্ট পেপারে সাইন করা মানে এগ্রি থাকা। শিক্ষিত মানুষেরা তো বিদেশে যায়। বিদেশে যেকোন ভ্যাকসিন নিতে হলে ফরমে সাইন করতে হয়। সেখানে যেরকম তথ্য থাকে তাই আছে আমাদের এখানেও। এটি সারা দুনিয়ার প্র্যাকটিস। বাংলাদেশে ইউজড টু না। ওষুধের দোকানে গিয়ে ওষুধ বা যে কারো কাজ থেকে ইনজেকশন নিয়ে নেয়। কিন্তু বিদেশে পেপার ওয়ার্ক করতে হয়।"
তিনি বলেন, "আমি মনে করি গুজব বা আতঙ্কে ভয় না পেয়ে যার যখন সুযোগ হবে তার ভ্যাকসিন নেয়া উচিত।"