ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: সাতক্ষীরা উপকূলে থমথমে আবহাওয়া, দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি
প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে সকাল ৯টার পর থেকেই আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনা। উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্নস্থানে থেমে থেমে হালকা মাঝারি বৃষ্টি। আধা ঘন্টা পরই আবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এভাবেই সাতক্ষীরা অঞ্চলে সকাল থেকে চলেছে আবহাওয়ার পরিস্থিতি। সাতক্ষীরার পুরো উপকূল জুড়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতকর্তা সংকেতের উপর নির্ভর করছে মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার বিষয়টি। এরই মধ্যে উপকূলের ইউনিয়ন পরিষদে ২৫ হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা উপকূলীয় গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের বাসিন্দা হুদা মালী জানান, বেলা ১২টার দিকে কপোতাক্ষ নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নেবুগুনিয়া এলাকার বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। তখন সবাই মিলে মাটি দিয়ে সেটি রক্ষা করা হয়েছে। তবে পরবর্তী রাতের জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস আসলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে সেটি নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। মূলত ঝড়ের কারণে খুববেশী ক্ষতি না হলেও বাঁধ ভেঙে গেলে বেশী বিপদে ঘটবে।
উপকূলীয় নীলডুমুর খেয়াঘাট এলাকার সাহেব আলী বলেন, দিনভর আকাশে কখনো মেঘ বৃষ্টি হচ্ছে আবার কখনো রোদ উঠছে এভাবেই চলছে। দূর্যোগকালীন সময়ের আগের যে আবহাওয়ার পরিবর্তন সেটি লক্ষ্য করছি। এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সকল মানুষের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কোন মানুষ এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি।
এদিকে, উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর পানি ২-৩ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল হক। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার কারণে নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তাছাড়া আমরা জিও ব্যাগসহ শ্রমিক প্রস্তুত রেখেছি। কোথাও বাঁধ ভেঙে গেছে এমন খবর পাওয়া মাত্রই মেরামত কাজ শুরু করা হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী বলেন, বর্তমানে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। এই সংকেত ৬ নম্বরে পৌঁছালে আমরা উপকূলীয় বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া শুরু করবো। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেজন্য আমাদের ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, স্বেচ্ছাসেবকসহ সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় প্রত্যেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের অনুকূলে ২৫ হাজার টাকা আপদকালীন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্য ও গোখাদ্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ইয়াস মোকাবেলায় সব ধরণের সর্বাত্মক প্রস্তুতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির বর্তমান অগ্রসর অবস্থা অনুযায়ী এটি ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগোচ্ছে। বুধবার (২৬ মে) দুপুরের দিকে এটি উপকূল অতিক্রম করবে। তখন উপকূলীয় অঞ্চলে ২-৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ঝড়ো হওয়ার গতিবেগ থাকবে ৮০-১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে ঝড়টি আমাদের উপকূল থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই এর প্রভাব শুরু হবে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।