তালা ভেঙে হলে ঢুকছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরা, প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ১০ টি হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী। বাকি ছয়টি হলেরও তালা ভাঙ্গতে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রদের নিরাপত্তা অবহেলায় প্রক্টরের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল ক্যাম্পাস।
শনিবার দুপুরে প্রথমে আল বেরুনী হল ও মীর মশাররফ হোসেন হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন ছেলেরা। পরে মেয়েদের ৮টি হলের তালা ভাঙেন তারা।
প্রথমে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ও সংঘর্ষ চলাকালে দায়িত্ব অবহেলায় প্রক্টরকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের ৭দিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে, হলে পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয়সহ সংঘর্ষে ক্ষয়ক্ষতির ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় স্থায়ীভাবে প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে।
এদিকে উপাচার্য ভবনের গেটের সামনে অবস্থানে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। সহিংসতা এড়াতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
দর্শন বিভাগের ৪৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আফনান সাদিক টিবিএস কে বলেন," প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ১২ টা পর্যন্ত প্রশাসনকে হল খুলে দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছি,কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। তাই নিজ অধিকার আদায়ে তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করছি।"
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী নুর হোসেন নাইম টিবিএস কে বলেন, "গতকাল রাতে চার ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। এর আগেও প্রশাসনকে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে জানানো হয়েছে, কিন্ত কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি।"
হলের তালা ভাঙার ব্যাপারে অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, "এই মুহূর্তে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খোলার কোনো অভিপ্রায় নেই প্রশাসনের। আমরা শিক্ষার্থীদের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।"
এদিকে ইতোমধ্যে মিছিল নিয়ে শাখা ছাত্রলীগ ছাত্রদের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে, ছাত্রদল লিখিত বক্তব্যে সংহতি জানিয়েছে। এছাড়া প্রগতিশীল ,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সকল সংগঠন মিছিলে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
এখন পর্যন্ত স্থানীয় গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্ব স্ব অবস্থানে রয়েছে দু'পক্ষই ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, "স্থানীয়দের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গেরুয়ার সংযোগস্থলে স্থায়ী গেইট নির্মাণের ব্যাপারেও কথা চলছে। তবে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিটি সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া মানা সম্ভব নয়। হলের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করার সিদ্ধান্তটি অমানবিক।"
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে মসজিদে মাইকিং করে স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন।