তিল ধারণের ঠাঁই নেই কক্সবাজারে
করোনা দুর্যোগের আতঙ্কে পর্যটনে মন্দা গেছে গত একটি বছর। এরপরও ২০২১ বর্ষবরণ ও ২০২০ সাল বিদায়কে ঘিরে কক্সবাজারে এসেছিলেন কয়েক লাখ পর্যটক। তারপর থেকে সৈকত পাড়ে তেমন জমেনি লোকসমাগম। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও সপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিনের ছুটি উপলক্ষ্যে এখানে এসেছে ৫ লাখের অধিক পর্যটক।
গত পক্ষকাল আগে থেকে আগাম বুকিং হয়ে আছে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। এসব হোটেল-রিসোর্টে দেড় লাখ মানুষের রাতযাপনের সুযোগ থাকলেও বাকি পর্যটকরা কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
ফাল্গুনের তপ্তরোদ ও সন্ধ্যার শীতল হাওয়ার স্পর্শ নিতে লোকারণ্য সৈকতের বালিয়াড়ি ও হোটেল-মোটেল জোনের অলিগলি। এতে তিল ধারণের যেন ঠাঁই নেই কক্সবাজারে।
টইটম্বুর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সৈকত তীরে।
গোসল করাকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষার্থে সর্তক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছেন জেলা প্রশাসনের সৈকত কর্মীরা।
ঢাকার উত্তরা থেকে আসা পর্যটক আমিন উদ্দিন বলেন, 'করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। বাসায় থাকতে থাকতে পরিবারের সবার মধ্যে একঘেঁয়েমি চলে এসেছিল। ভাষা দিবসের ছুটিসহ টানা বন্ধ পেয়ে বাড়ির সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। এত লোকসমাগম হবে কল্পনাও করতে পারিনি।'
তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিডের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেকার বলেন, 'শীত মৌসুম শেষ হয়েছে। ফাগুনের পর থেকে মিষ্টি রোদ পাওয়া দুষ্কর। ফাগুনের শুরুতে টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভ্রমণ পিপাসু কক্সবাজারে এসেছেন। এবারও টানা তিনদিন ছুুুটি পড়ায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট আগাম বুকিং হয়েছে।'
কলাতলীর মোহাম্মদীয়া গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'হোটেল-মোটেলে যে পরিমাণ ধারণক্ষমতা, তারচেয়েও লোকসমাগম বেশি বলে মনে হচ্ছে এবার। রুম বুকিং করে যারা এসেছেন, তারা ছাড়া বাকিরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ দেড় লক্ষাধিক লোক থাকার আয়োজন থাকলেও সৈকত শহর কক্সবাজারে ৪-৫ লাখের অধিক পর্যটকের আগমন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।'
সী সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, 'বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ সৈকতে এসেছেন। ঢেউয়ের তালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সব বয়সের পর্যটক। অনেকে বিপদসীমার বাইরেও চলে যান। তাদের কিনারায় আনতে এবং নিরাপদ থাকতে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে।'
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, 'কক্সবাজারে প্রচুর লোকজন এসেছে। আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। যেকোনো ধরনের হয়রানি রোধে জেলা প্রশাসনের দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত হোটেল-মোটেল জোনে টহলে রয়েছে।'
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, '২০২০ সালটা সবকিছুকে স্তিমিত করে বিদায় নিয়েছে। ভাষা দিবস উপলক্ষ্য করে পর্যটক উপস্থিতি আমাদের আশান্বিত করছে। মহামারি কাটিয়ে আবারও সুন্দর বাণিজ্যিক সময় পাওয়ার প্রত্যাশা করছি।'
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, 'পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত ও আশপাশে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। সৈকতে বীচ বাইক নিয়েও রয়েছে টহল। রয়েছে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ পুরো সৈকত পুলিশের নজরদারির আওতায় রয়েছে।'
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, 'পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের সেবা দিতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র। পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।'
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, 'পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানি রোধে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্য সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।'