তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের চুক্তি স্বাক্ষর
দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের লক্ষ্যে সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামের সাথে কনস্ট্রাকশন এন্ড মেইনটেনেন্স এগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীগণের সাথে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) এই চুক্তি স্বাক্ষর করে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগাযোগ বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আফজাল হোসেন সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
কনসোর্টিয়ামের সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিজ নিজ দেশ থেকে অনুরূপ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে কনসোর্টিয়ামের অস্থায়ী সদর দপ্তর সিঙ্গাপুরে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রেরণ করবেন।
সিমিউই-৬ কনসোর্টিয়ামে যোগদানকারী ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিংটেল (সিঙ্গাপুর), বিএসসিসিএল (বাংলাদেশ), টেলিকম (মালয়েশিয়া), এসএলটি (শ্রীলংকা), ধিরাগু (মালদ্বীপ), এনআইটুআই (ভারত), টিডব্লিউএ (পাকিস্তান), জিবতি টেলিকম (জিবতি), মবিলিঙ্ক (সৌদি আরব), চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল, চায়না টেলিকম গ্লোবাল লিমিটেড চায়না, ইউনিকম চায়না, মাইক্রোসফট (যুক্তরাষ্ট্র), টেলিকম ইজিপ্ট (মিশর) এবং অরেঞ্জ (ফ্রান্স)।
ডাক ও টেলিযোগাযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দেশে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশের অনন্য এ কার্যক্রমের শুভযাত্রা ঘোষণা করেন।
২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, "আগামী দিনে ডিজিটাল সংযুক্তির বর্ধিত চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার সাথে সি-মি-উই-৬ নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনে অভাবনীয় অবদান রাখবে।"
বিএসসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং সি-মি-উই-৬ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কামাল আহমেদ বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার সাবমেরিন ক্যাবলকে দেশের অত্যন্ত অপরিহার্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উল্লেখ করে বলেন, বিনা মাশুলে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে ১৪ বছর তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া থেকে পিছিয়ে রাখে।
তিনি বলেন, দেশে ২০০৮ সালে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারী ছিলো মাত্র ৭ লাখ। কিন্তু বর্তমানে দেশে ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ২৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশের আরো একটি ঐতিহাসিক অর্জন।
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল বাস্তবায়নে ২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরু হয়। সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের তিনটি প্রস্তাবকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে একনেক সভায় তা অনুমোদিত হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে কনসোর্টিয়াম কর্তৃক সরবরাহকারী নির্বাচনে বেশ বিলম্ব হয়। ফলে গত ডিসেম্বর ২০২০ এর মধ্যে কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবিত কার্যাবলীটি চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল চালু হয় ২০০৬ সালে। আর দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু হয় ২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে।
বিসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, 'আজ দেশে ২৭০০ জিবিপিএস-এরও বেশী আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ ব্যাবহৃত হচ্ছে, যার মধ্যে বিএসসিসিএল একাই সরবরাহ করছে প্রায় ১৬৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ।'
২০২৪ সাল নাগাদ দেশে ৬০০০ জিবিপিএস-এরও বেশী আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি।
দেশে সরবরাহের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশেও ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি করছে বিএসসিসিএল। ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিএসএনএল এর নিকট ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ রপ্তানির জন্য নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এছাড়া বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম দিকের তথা ইউরোপের দিকের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেয়ার জন্য সৌদি আরব ও ফ্রান্সের সাথে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, মালয়েশিয়ার সাথে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান বিএসসিসিএল'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক।