ত্রাণ কমিটির সদস্যদেরকেই ত্রাণ দিলেন এমপি, বিব্রত হয়ে ফিরিয়ে দিলেন অনেকে
দুস্থ অসহায় মানুষের বদলে ত্রাণ কমিটির লোকজনকে ত্রাণ দেয়ার বিষয় নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নে। এ ঘটনায় বিব্রত হয়ে ত্রাণ কমিটির ওই নেতারা ফেরত দিয়েছেন ত্রাণ।
মঙ্গলবার জেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের নিয়ে গঠিত ত্রাণ কমিটির নেতাদের ১৪৫ প্যাকেট ত্রাণ দেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট বীরেন শিকদার।
বিনোদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় ওয়ার্ড ত্রাণ বিতরণ কমিটির সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, "মঙ্গলবার এমপি সাহেব নিজে উপস্থিত থেকে আমাদের ত্রাণ বিতরণ করেন। ওয়ার্ড কমিটির প্রত্যেককে ১ প্যাকেট করে খাদ্য সামগ্রী দেন। এলাকার দুস্থ মানুষের বদলে আমাদেরকে ত্রাণ দেয়ায় বিব্রত হয়েছি বটে তবে এমপি নিজ হাতে দেয়ায় তার সম্মানার্থে আমি এটি গ্রহণ করেছি।"
তিনি বলেন, এ সময় এ ইউনিয়নের ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রাণ বিতরণ কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা বিব্রত হয়ে ত্রাণ ফেরত দেন। অন্যান্য ওয়ার্ডের অনেকেও ত্রাণ ফেরত দেন বলে তিনি জানান।
বিতরণকৃত এই ত্রাণের মধ্যে ছিল ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, আধা কেজি লবণ ও একটি সাবান।
বিনোদপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার সাহা জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় বিনেদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রত্যেক ওয়ার্ডের ত্রাণ কমিটির ১৫ সদস্যকে উপস্থিত হতে বলা হয়। সে অনুযায়ী আমরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলে এমপি বীরেন শিকদার আমাদেরকে একটি করে ত্রাণের প্যাকেট দেন। এতে আমরা বিব্রত হই। পাশাপাশি ১ নম্বর, ২ নম্বর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫ সদস্যের ত্রাণ কমিটির প্রত্যেকেই ফেরত দেই। একই সাথে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দুস্থ অসহায়দের বদলে আমাদের ত্রাণ কমিটির নেতাদের কেন ত্রাণ দেয়ার জন্যে মনোনীত করা হলো এমন প্রশ্ন তুলি। এ সময় এমপি বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজেই বিব্রত হন। পরে ওই ত্রাণ অন্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
বিনোদপুর ত্রাণ কমিটি আহবায়ক ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান সংগ্রাম বলেন, "প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ, অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ১৫ জনের একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে প্রত্যেককে একটি করে প্যাকেট দিয়ে তাদের পছন্দ অনুযায়ী এলাকার যে কোন ব্যক্তিকে দিতে বলা হয়। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি ভুল বুঝে তা ফেরত দেন। পরে এগুলো বিভিন্ন বাড়িতে পৌছে দেয়া হয়।"
বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও একই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান শিকদার বলেন, "এটি এমপির ব্যক্তিগত সহযোগিতা। যা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেই দেবার কথা ছিল। সেটাই দেয়া হয়েছে।"
এ বিষয়ে এমপি বীরেন শিকদার বলেন, "ত্রাণ কমিটির মাধ্যমে ত্রাণগুলো প্রকৃত দুস্থদের মধ্যে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ত্রাণ কমিটির লোকজন এটি তাদের দেয়া হচ্ছে মনে করায় এটি নিয়ে জটিলতা তৈরী হয়। পরে এগুলো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে রেখে প্রকৃত দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়।"