নতুন কাস্টমস রুলস প্রয়োগ না করতে ভারতকে অনুরোধ ঢাকার
নতুন কাস্টমস রুলস সাফটা চুক্তির লঙ্ঘন উল্লেখ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ রুলস প্রয়োগ না করার অনুরোধ করেছে ঢাকা। অন্যদিকে দিল্লী বলেছে, তাদের নতুন কাস্টমস রুলস সকল দেশের জন্যই প্রযোজ্য হবে। তবে এই রুলসের কারণে বাংলাদেশের কোন পণ্য রপ্তানিতে সমস্যা দেখা দিলে তা কেইস টু কেইস ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
সোমবার রাজধানীর হোটেল কন্টিনেন্টালে আয়োজিত দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সাউথ এশিয়া ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) কার্যকর করতে ভারতকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলেছে বাংলাদেশ। এই সাফটা চুক্তির আওতায়ই বাংলাদেশ ভারতে তামাক ও এলকোহল জাতীয় ২৫টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের পর সাফটার কোন বৈঠক হয়নি।
সভা শেষে বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমরা সাফটাসহ বাংলাদেশ ও ভারত সদস্য রয়েছে এমন আঞ্চলিক ফোরামগুলোকে কার্যকর করতে প্রস্তাব করেছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাফটাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সভায় বাংলাদেশের পাটপণ্যে ভারতের আরোপিত এন্টিডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহার, নতুন করে কাউন্টারভেলিং ডিউটি আরোপ না করা, এডিবল অয়েল রপ্তানিতে নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার দূর করা ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি মাল্টিপল ভিসা প্রাপ্তি সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব ও ভারতের বাণিজ্য সচিবের মধ্যকার বার্ষিক এই সভা সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারত বলেছে, এন্টিডাম্পিং ডিউটি আরোপ করে তাদের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ট্রেড রেমিডিস (ডিজিটিআর)। কোয়াসি-জুডিশিয়াল প্রসেস অনুসরণ করে এ ডিউটি আরোপ করে তারা। সেখানে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ এ ডিউটি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করলে তা ডিজিটিআর এর কাছে পাঠানো হবে।
গতবছর জানুয়ারিতে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের সভায়ও একই কথা বলেছিলেন ভারতের প্রতিনিধিরা।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ট্রেড রিমিডিয়াল মেজার্স নামে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পক্ষে একমত হয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। আগামী ছয়মাসের মধ্যে এটি স্বাক্ষর হতে পারে বলে সচিব পর্যায়ের সভায় উপস্থিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন।
দুই দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। উভয়পক্ষ বর্তমানে এ চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত হয়েছেন বাণিজ্য সচিবদ্বয়। আগামী বছরের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় দুই দেশ।
সভায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের সনদ গ্রহণ করা, স্থলবন্দরগুলোর ভারতীয় অংশে পণ্যমান পরীক্ষার জন্য ল্যাব স্থাপন করা এবং মেঘালয় সীমান্তের বর্ডার হাট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে রিজিওনাল কানেকটিভিটি, স্থলবন্দর দিয়ে সুতাসহ টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ভারতের পক্ষ থেকে রিজিওনাল কানেকটিভিটি বাড়ানো, স্থলবন্দর দিয়ে সুতাসহ টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানির সুযোগ দেওয়া, সেপা চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
একশ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় সামান্য। গত অর্থবছর দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.১০ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি হয়েছে ৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার। চীনের পরেই ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।