পঞ্চম ধাপের প্রথম যাত্রায় ২,২৬০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে ভাসানচরের পথে ৬ জাহাজ
পঞ্চম ধাপের প্রথম যাত্রায় দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়টি জাহাজ। বুধবার (৩ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে তাদের নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে জাহাজগুলো। এর আগে সকাল ৭ টা হতে রোহিঙ্গারা জাহাজে উঠা শুরু করে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্র।
স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে ট্রানজিট পয়েন্টে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের মঙ্গলবার (২ মার্চ) দিনের পৃথক সময়ে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। আগের মতো উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে মঙ্গলবার বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিট ও বিকেল সাড়ে ৩টায় দুভাগে ভাগ করে বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব যানবাহন আগে থকেই প্রস্তুত রাখা হয়। ৩৪টি ক্যাম্প থেকেই রোহিঙ্গারা ট্রানজিট পয়েন্টে আসেন। অনেকে সোমবার বিকেলে এবং মঙ্গলবার সকালে এসে পৌঁছান।
আজ বুধবার আরও সহস্রাধিক রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করবেন। আজ যারা ভাসানচরের পথে রওনা দিবেন তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ও বুধবার সকাল-দুপুরে ট্রানজিট পয়েন্ট এসেছেন। দুদিনের যাত্রার জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক বাস, একাধিক কাভার্ডভ্যান ও প্রয়োজনীয় অন্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু পূর্বের মতো এখনো সংশ্লিষ্ট কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। এর আগে চার দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে আবাসন নিশ্চিত হয়েছে ৯ হাজার ৫৪০ জনের।
কক্সবাজারের আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দফায় কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে ৯ হাজার ৫শ' ৪০ জন রোহিঙ্গা। প্রথম দফায় গত ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে গিয়েছেন। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে যান ১ হাজার ৮০৫ জন ও তৃতীয় ধাপে দুইদিনে ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি ৩ হাজার ২০০জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তর হয়।
১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম দিন ২ হাজার ১৪জন ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ৮৭৯জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে উখিয়া কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প ত্যাগ করেন। আজ (২ মার্চ) ও আগামীকাল আরও তিন সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পে আশ্রয়ে থাকাদের মধ্য থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তর করার পরিকল্পনায় কাজ করছে সরকার।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হওয়ায় পরবর্তী কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ লাখ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।