প্রতিবেশি ও বন্ধুরাও মনে করেন, বিপ্লব এ কাজ করেননি
শৈশব থেকে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যকে এলাকাবাসী নম্র ও ভদ্র ব্যবহারের ছেলে হিসেবেই জানেন। কারও সঙ্গে কোনো বিষয়ে তার বিরোধের কথাও শোনা যায়নি। মুসলমান বন্ধু-বান্ধব রয়েছে তার। পড়শিদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো।
আল্লাহ ও মহানবী ও হযরত মুহম্মদ (সা:)-কে কটাক্ষ করে ফেসবুকে তার মন্তব্য করার বিষয়টিও তাই স্থানীয়দের অবাক করেছে। বিপ্লব এমন কাজ করতে পারেন বলে এলাকাবাসীও মনে করছেন না। তাদের ধারণা, বিপ্লব কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে কে বা কারা এটা করেছে তা নিয়ে নিশ্চিত নন তারাও।
বিপ্লবের বন্ধু কার্তিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিপ্লবের মুসলিম বন্ধুবান্ধব রয়েছে। অন্য কোনো ধর্ম বা কাউকে নিয়ে কটু মন্তব্য করতেও তাকে দেখা যায়নি।
"ফেসবুকে কাউকে কটাক্ষ করেও সে কখনও কিছু দেয়নি। ধর্ম নিয়ে সে এরকম বাজে মন্তব্য করবে, এটা অসম্ভব"— বললেন কার্তিক।
তবে কার্তিক মনে করেনন, এমন কিছু বিপ্লব যদি সত্যিই করে থাকেন তবে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
বিপ্লবের পড়শি গণি মিয়া মনে করেন, বিপ্লবের মতো ভালো ছেলেই তাদের গ্রামে নেই।
তিনি বলেন, "বিপ্লব এ কাজ করেনি। আর যদি করেও থাকে তবে কেউ তাকে বাধ্য করেছে, নয়তো সে কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপ্লবের আরেক বন্ধু বললেন, ‘ইসকন’ (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইট ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস)-এর সঙ্গে যোগাযোগ রযেছে বিপ্লবের। এটি একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন।
এই বন্ধু নিশ্চিত যে, বিপ্লব ফেসবুকে এমন ধরনের কমেন্ট পোস্ট করেননি।
"তাকে কেউ বাধ্য করেছে, নয়তো কেউ এমনভাবে কাজটা করেছে যে, মনে হচ্ছে সে-ই করেছে"—বন্ধুর মত।
উল্লেখ্য, ১৭ অক্টোবর বিপ্লব নিজেই তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বোরহানউদ্দিন থানায় জিডি করেছিলেন।
২০১০ সালে বোরহানউদ্দিনের কুলসুম রহমান হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন বিপ্লব। এরপর স্থানীয় হাফিজ রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন ২০১২ সালে। এ বছর তিনি ভোলা সদর উপজেলার নাজিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি (পাশ) ও সার্টিফিকেট কোর্স পাশ করেছেন।
বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে একটি সাধারণ টিনের চালার ঘরে থাকেন বিপ্লব। দুই ভাই আর এক বোন তার। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ভাই ওমানে থাকে, ওখানেই কাজ করেন। বাবা চন্দ্র মোহন বৈদ্য একজন কৃষক। মা বাসন্তী রাণী গৃহিণী।
যখন বিপ্লব স্কুলে পড়তেন, তখন চন্দ্রকে অনেক কষ্টে দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হত।
"মাঝে মাঝে খাওয়া জুটত না, ছেলের পড়াশুনার খরচ জোগাতে গিয়ে। এখন তো আমি অসুস্থ। আমার দুই ছেলেই ওকে খরচ দেয়"— চন্দ্র বললেন।
চন্দ্রর স্বপ্ন ছিল, ছেলে একটা ভালো চাকরি পাবে। অথচ সেই ছেলেই এখন জেলে। এটা মেনে নিতে পারছেন না বাবা।
বিপ্লবের পড়শিদের মতো চন্দ্রও মনে করছেন, তার ছেলে কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার। কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি সত্যিকারের অপরাধীদের খুঁজে বের করার আবেদন জানালেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "ইসকন বা অন্য কোনো সংগঠনের কথা জানি না। আমি শুধু ছেলেকে ফেরত চাই।"
মা বাসন্তী রাণী বললেন, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চলতে শিখিয়েছেন তিনি ছেলেকে। তাই তিনি মনে করেন, বিপ্লব যদি এ ধরনের কাজ করেও থাকে, কেউ তাকে বাধ্য করেছে। এটা তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।
কর্তুপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বান জানান ঘটনাটির বড়সড় তদন্ত করে সত্য ঘটনা বের করে আনতে।
তবে বিপ্লব সত্যিই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তার শাস্তি মেনে নিতে মায়েরও আপত্তি নেই বলে জানালেন।
পুলিশের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত এক মামলায় বিপ্লবসহ তিন জনকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘বিপ্লব ওই ধরনের কিছু পোস্ট করেছে কি না তা নিয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। সত্য ঘটনা জানতে আরও কয়েক দিন লাগবে।’