ফাইজারের ভ্যাকসিনের আলোচনায় দেশের দুই কোম্পানি
আমেরিকান ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ফাইজার তাদের ভ্যাকসিন বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ শুরু করলে বাংলাদেশের দুই কোম্পানি -জনতা ট্রেডার্স এবং র্যাডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সে প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হবার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
যেহেতু ইতোমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফাইজার/বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে, ফলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকেও এই ভ্যাকসিন সরবরাহে কোন বাধা থাকার কথা না, এমন আশাই ব্যক্ত করলেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
নীতি অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ফাইজার তাদের ভ্যাকসিন সরকারের মাধ্যমে সরবরাহের সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ।
অন্যদিকে জনতা ট্রেডার্স এবং র্যাডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড -এই ব্যক্তিমালিকানাধীন সংস্থা দুটি দেশের ভেতরে ফাইজারের ওষুধের স্থানীয় সরবরাহকারী । তারা ইতোমধ্যে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিটির সাথে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে।
"গত ২৫টি বছর ধরে আমরা দেশে ফাইজারের পণ্যের পরিবেশক হিসেবে ভূমিকা পালন করার সুবাদে এখন নিয়মিত মার্কিন কোম্পানিটির সাথে আলোচনা বহাল রেখেছি- জনতা ট্রেডার্সের মহা ব্যবস্থাপক একেএম রাজিবুর রহমান এ কথা জানান।
যদিও এখনো ফাইজার ভ্যাকসিনের বেসরকারীকরণ নিয়ে কিছুই জানায়নি।
"কিন্তু যখনই তারা বাণিজ্যিকভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করবে, আমাদের একটা অগ্রাধিকার থাকবে"-বলেন রাজিবুর।
র্যাডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদিও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে একই রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ।
আমদানিকারকেরা যদি ফাইজারের ভ্যাকসিন দেশে নিয়ে আসতে চান তাহলে তাদেরকে নিজেদের উদ্যোগে 'কোল্ড চেইনে' মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একে সংরক্ষণ করতে হবে। কিছু বিদেশি কোম্পানির সাথে এ নিয়েও আলোচনা অব্যাহত আছে।
শাহরিয়ার জানান, এই বিশেষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণের উপযোগী রেফ্রিজারেটর আমদানির উদ্দেশ্যে তাঁর কোম্পানি কিছু বিদেশি কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
"আমরা ইতোমধ্যে আমাদের হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করে রেখেছি যেন অনুমতি মিললেই চটজলদি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি"।
এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক একমাত্র একমাত্র অনুমোদিত ভ্যাকসিন ফাইজারের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের তিন সপ্তাহ আগে ১১ই ডিসেম্বরে, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন সংস্থা একে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে এর টিকাটি ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছিল।
আমাদের দেশের নীতি অনুযায়ী, যদি কোন ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অথবা মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে যায়, তাহলে একে বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্যও নিবন্ধন করানো সম্ভব, জানান শাহরিয়ার।
" আমরা দেশের মানুষের জন্য এই ভ্যাকসিন আমদানি করতে চাচ্ছি। পরবর্তীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান সম্প্রসারিত কর্মসূচীর (ইপিআই)মাধ্যমে একে সরবরাহ করা যাবে" ।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র আয়ুব হোসেন জানান, যদি বিশেষজ্ঞ রয়েছে এমন কোন সংস্থা ফাইজার ভ্যাকসিনের আমদানির জন্য আবেদন করে তাহলে তাঁরা এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন আছে বলেও বিবেচনা করবেন।
ভ্যাকসিন নিয়ে কোন রকম অনৈতিক বাণিজ্যকে যে ঔষধ প্রশাসন প্রশ্রয় দেবে না সেটিও জানান তিনি।
বাংলাদেশ আগেই ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সরবরাহ নিয়ে চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের হয়ে এই টিকা বিতরণ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। অক্সফোর্ডের টিকা মাইনাস ২ থেকে মাইনাস ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কার্যকর।
বাংলাদেশ কোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের ওপরেও আস্থা রাখছে। জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই প্রথম পর্যায়ের ৫ মিলিয়ন ডোজ অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন দেশে নিয়ে আসা হবে।