বাংলাদেশের হ্যাকার গ্রুপের বিরুদ্ধে ফেসবুকের ব্যবস্থা গ্রহণ
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের হ্যাকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেয়া এক ঘোষণায় ফেসবুকের হেড অব সিকিউরিটি পলিসি নাথানিয়েল গ্লেচার ও সাইবার থ্রেট ইনটেলিজেন্স ম্যানেজার মাইক ডিভিলয়ান্সকি এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানিয়েছেন।
"ভিয়েতনাম ভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপ এপিটি৩২ ও বাংলাদেশ ভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। ম্যালওয়্যার ছড়ানো এবং ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে আমাদের প্লাটফর্মে বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না সে ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে।" বলেন তারা।
ম্যালওয়্যার ছড়ানো, ফেসবুকের বিভিন্ন প্লাটফর্ম হ্যাক বা ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক রোধ করতে কাজ করেন ফেসবুকের থ্রেট ইনটেলিজেন্স ও সিকিউরিটি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা।
'আমাদের এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতেই আমাদের দল প্রতিনিয়ত তাদের এধরণের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের সম্ভাব্য ঝুঁকির ব্যাপারে জানিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।'
'ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি করা এসব দলের বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থা ও সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের ব্যাপারেই জানাবো আজকে। এই দুটি দল বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে৷ ভিয়েতনামের দলটি প্রধানত ম্যালওয়্যার ছড়ানোর কাজ করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের দলটি পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ও পেজ রিপোর্ট করে ডিজেবল করে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে।' বলা হয় ঘোষণায়।
'আমাদের চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি, থ্রেট ইনভেস্টিগেটর সহ নিরাপত্তা বিভাগের অন্যান্য দলগুলো প্রতিনিয়ত এ কাজে উন্নত হচ্ছে, ফলে এধরণের ব্যক্তি ও দলের অচিহ্নিত থাকা কঠিন হবে। আমরা সবসময়ই আমাদের অনুসন্ধানের ফলাফল জানিয়ে ব্যবহারকারীদের সচেতন করবো যাতে তারা নিজের অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম হন।'জানানো হয় ঘোষণাটিতে।
বাংলাদেশ
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ ভিত্তিক দলটি স্থানীয় ও প্রবাসী বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে তাদের অ্যাকাউন্ট নিজেদের আয়ত্ত্বে আনা ও বন্ধ করে দেয়ার কাজ করে।
বাংলাদেশের দুটি অলাভজনক সংগঠন ডন (ডিফেন্স অব ন্যাশন) এবং ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস ফাউন্ডেশনের (ক্র্যাফ) এসব কাজের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।
ঘোষণাটিতে এব্যাপারে বলা হয়, "ডন ও ক্র্যাফ দুটি দল একত্রে ফেসবুকের বিভিন্ন নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ দাখিল করে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট রিপোর্ট করেছে। ছদ্মবেশী একাউন্ট খোলা, মেধাসম্পদ আইন অমান্য, নগ্নতা ও সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অভিযোগে তারা ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট রিপোর্টের কাজ করে। তারা মূলত নিজস্ব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট ও পেজ হ্যাক করেছে। কোনো পেজের একজন এডমিনের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বাকি এডমিনদের পেজ থেকে সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পেজগুলো নিজেদের আয়ত্ত্বে আনে বা পেজগুলো বন্ধ করে দেয়। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যবহারকারীদের ইমেইল ও ডিভাইস নিজেদের আয়ত্ত্বে এনে এবং আমাদের অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করার পদ্ধতির অপব্যবহার করে এসব নির্দিষ্ট হ্যাকিংয়ের কাজগুলো করা হয়েছে।"
এধরণের কাজ বন্ধ করতে এধরণের কার্যক্রমের সাথে জড়িত অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলো বন্ধ করা হয়েছে এবং ফেসবুকের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের সাথে জড়িত সহযোগী দলগুলোকে তাদের ব্যাপারে তথ্য দেয়া হয়েছে বলে জানায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
"ব্যবহারকারীদের নিজ অ্যাকাউন্টে সুরক্ষায় সচেতন থাকার এবং সন্দেহভাজন কোনো লিংকে ক্লিক ও অবিশ্বস্ত উৎস থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।"
ভিয়েতনাম
ভিয়েতনাম ভিত্তিক এপিটি৩২ ভিয়েতনামের স্থানীয় ও প্রবাসী মানব অধিকার কর্মী, লাওস-কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে থাকে।
"আমাদের অনুসন্ধানে ভিয়েতনামের আইটি প্রতিষ্ঠান সাইবারওয়ানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। আমাদের সহযোগি সংস্থাগুলো ইতোপূর্বেও এপিটি৩২'র বিভিন্ন ধরণের কৌশলে ম্যালওয়্যার ছড়ানোর ব্যাপারে জানিয়েছে। আমরা বিগত কয়েক বছর ধরেই এই দলটির চিহ্নিতকরণ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কাজ করছি।"