বাগেরহাটে মিলেছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বিস্ময়কর রাজকাঁকড়া
বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির রাজকাঁকড়া পাওয়া গেল বাগেরহাটের মৎস্য ঘেরে । রামপাল উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামের আমানুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির মৎস্য ঘেরে এই কাঁকড়াটি পাওয়া যায়। কাঁকড়াটি জোয়ারের পানিতে সাগর থেকে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছে মৎস্য বিভাগ। সংকটাপন্ন প্রজাতির এই কাঁকড়াটিকে ফরমালিন দিয়ে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, অশ্বক্ষুরের ন্যায় দেখতে উপবৃত্তাকার এই কাঁকড়াটির ইংরেজী নাম Mangrove Horseshoe crab। এর বৈজ্ঞানিক নাম Carcinoscorpius rotundicauda। এটি রাজকাঁকড়া হিসেবে অধিক পরিচিত। কাঁকড়া বলা হলেও প্রজাতিগত দিক থেকে মাকড়সার সঙ্গে বেশি মিল রয়েছে এটির। এরা লিমুলিডি গোত্রের অন্তর্গত সামুদ্রিক সন্ধিপদী প্রাণি। এরা প্রধানত অগভীর সমুদ্র ও নরম বালি বা কাদা সমৃদ্ধ সমুদ্রতলে বাস করে।
কালেভদ্রে যৌনসঙ্গমের জন্য এদের ডাঙায় আসতে দেখা যায়। জন্মের সময় সাত থেকে আট সেন্টিমিটার এই প্রাণিটি প্রায় ৮ বছর কাদা মাটি বা নরম বালুর নিচে থাকে। ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে তারা অগভীর সমুদ্রে চলে যায়। পরিপক্ক অবস্থায় এটি ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর মাথায় একটি শুঁড়ের মত রয়েছে। খোলস বেশ শক্ত। সার তৈরির কাজে একসময় ব্যবহৃত হত এটি। এই কাঁকড়ার নীল রক্ত বহুমূল্যবান। এই রক্তের অসাধারণ ক্ষমতাবলে লিমিউলাস বা অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়ারা যে কোনও ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে এদের গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি আরও জানান, "রাজকাঁকড়া সাধারণত আমাদের এলাকায় পাওয়া যায় না। কালেভদ্রে যৌনসঙ্গমের জন্য সমুদ্র থেকে এদের ডাঙায় আসতে দেখা যায়। কিন্তু ৩১ জুলাই রামপাল উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামের আমানুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির মৎস্য ঘেরে এই কাঁকড়াটি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আমরা কাঁকড়াটিকে সংগ্রহ করি। এটি এখন মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। মারা গেলে আমরা একে ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখব। ধারণা করছি কাঁকড়া টি সমুদ্র থেকে জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে"।
তিনি বলেন, "এই কাঁকড়াকে 'জীবন্ত জীবাশ্ম'ও বলা হয়, কারণ ৪৪ কোটি ৫০ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব ছিল। ডাইনোসরের চেয়েও প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল এই লিমুলাস। তাই এই জলজ প্রাণী বিজ্ঞানীদের কাছে আজও বিস্ময়ের"।