বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইয়ের শাবক নিয়ে উচ্ছ্বসিত গাজীপুরের সাফারি কর্তৃপক্ষ
শিকারির লোভ আর বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় দেশ থেকে নীলগাই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে নীলগাইয়ের নতুন শাবক জম্ম নেওয়ায় এই প্রজাতির বংশবিস্তার নিয়ে আশাবাদী গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। পার্কে জন্ম নেওয়া নীলগাইয়ের দুটি শাবক সুস্থ ও সবল রয়েছে বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান জানান, "নীলগাই ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আকৃতির অ্যান্টিলোপ। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্রে নীলগাই বেশি দেখা যায়। তবে এটি দেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম একটি প্রাণী। ইংরেজিতে নীলগাই ব্লু বুল নামে পরিচিত।"
বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫০ সালের আগে দেশে নীলগাইয়ের বিচরণ ছিল। তৃণভোজী এ প্রাণিটি শিকারিদের লোভী মানসিকতা, যত্রতত্রভাবে জবাই করে মেরে খেয়ে ফেলা এবং বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এ অবস্থায় গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মনাকষা এলাকা থেকে জবাই করার প্রস্তুতির সময় বিজিবি সদস্যরা একটি স্ত্রী নীলগাই উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হস্তান্তর করেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁ জেলার জোত বাজার এলাকা থেকে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করে বনবিভাগ। শিকারিদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এই পুরুষ ও মাদি নীলগাই দুটি সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে রাখা হয়। এ দুটি নীলগাই থেকে ১১ মাস পর গত ১ আগস্ট জন্ম নেয় দুটি শাবক। পার্কের লোকজন এবং কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কোর সাফারিতে মা-বাবার সঙ্গে অবাধ বিচরণ করছে শাবক দুটি। খাচ্ছে ঘাস, তৃণলতাসহ পার্কের দেওয়া খাবার।
তবিবুর রহমান আরো জানান, "পুরুষ নীলগাই দেখতে গাঢ় ধূসর, অনেক সময় নীলচে আভা দেখা যায় বলে এদের নীলগাই নামকরণ করা হয়েছে। পুরুষ নীলগাইয়ের উচ্চতা ৫২-৫৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। মাদি নীল গাই বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এদের গর্ভধারণ কাল ২৪৩ দিন এবং একসাথে এক থেকে তিনটি বাচ্চা হয়। এরা ছোট ঝোপ বা বিক্ষিপ্ত গাছের মধ্যে থাকতে ভালোবাসে। এদের গড় আয়ু ২১ বছর। প্রাকৃতিক পরিবেশে শাবক জম্ম নেওয়ায় বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণিটির বংশবিস্তারে আমরা আশার আলো দেখছি এবং নিঃসন্দেহে এটি আনন্দের খবর। "
কোর পার্কের কর্মী সোহেল রানা জানান, "দুটি নীল গাই আনার পরে আমরা এগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখি। এরপর দুটি শাবকের জম্ম নেয়। বাচ্চাদুটি লাজুক প্রকৃতির, সব সময় জঙ্গলের ভেতর থাকতে চায়। ওদের আমরা গাজর, বরবটি, শসা, ভূষি, ভুট্টা ভাঙা এবং ঘাস খেতে দিচ্ছি। এছাড়া কদম পাতা এরা খুব পছন্দ করে।"