ভাইরাস বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না
ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে ফিরছে বাংলাদেশ, যা কোভিড-১৯ প্রভাবিত অর্থনীতিটির বড় ধরনের ধাক্কা সামলে ওঠার সক্ষমতা তুলে ধরেছে। জুন ২০২১- এ সমাপ্ত চলতি অর্থবছরে পতন থেকে দেশটির প্রবৃদ্ধি ভি- আকৃতির উত্থান দেখবে বলে আমরা আশা করছি। মহামারির প্রাথমিক বিপর্যয় পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির উত্তরণের এ সম্ভাবনা প্রবলভাবেই দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, দেশটি বিকাশের সঠিক পথেই রয়েছে।
মহামারি পরবর্তীকালে সীমিত চাহিদা থেকে পরিত্রাণের মতো উন্নতি এবং অন্যান্য সহযোগী মৌল ভিত্তির প্রভাব হবে বিকাশের প্রধান চালিকাশক্তি। ২০২৬ সাল নাগাদ অর্থনীতির কলেবর বাড়ার এ চক্রাকার গতি বাৎসরিক সাড়ে ৭ শতাংশে রূপ নেবে।
মহামারির আগে এটির প্রকৃত অবস্থা ৬.৭ শতাংশ ছিল; বলে ব্লুমবার্গের নিজস্ব অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের আওতায় অনুমান করা হয়। আগামীতে, আমাদের মৌলভিত্তির অনুমানেও দেশটির অর্থনীতিতে ভাইরাস সৃষ্ট কারণে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান: ভাইরাস সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধিকে পথচ্যুত করবে না কেন?
পণ্য রপ্তানির শক্তিশালী পারফরম্যান্স বিশাল জনসংখ্যার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়িয়েছে। ফলে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে নতুন বিনিয়োগে। এর ধারাবাহিকতায় গত এক দশকে দেশটির উৎপাদনশীলতা বাড়তে থাকে। দীর্ঘমেয়াদে এসব অন্তর্নিহিত কারণই অর্থনৈতিক স্ফীতির মূল চাবিকাঠি রূপে ভূমিকা রাখবে, বলে আশা করা হচ্ছে।
• চলতি বছরের জুনে সমাপ্ত গত অর্থবছরে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ২ শতাংশের কাছাকাছি পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চলতি অর্থবছরে তা ৯.৫ শতাংশের উচ্চ-প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে, বলে অনুমান করছে আইএমএফ। পূর্বের স্তিমিত চাহিদার অবসান- এই সময় অন্যান্য মৌলিক অবস্থার সঙ্গে মিলে বাড়াবে প্রবৃদ্ধিকে। এর সঙ্গে চক্রাকারে জিডিপি'র বিকাশ ২০২৬ সাল নাগাদ সাড়ে ৭ শতাংশ হার ধরে রাখবে।
• ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক লকডাউনের পদক্ষেপ সত্ত্বেও ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩ শতাংশ কমতে পারে, মহামারির আগের যে প্রাক্কালন করা হয়েছিল তার তুলনায়। ২০২০ অর্থবছরের হারিয়ে যাওয়া উৎপাদনশীলতার কারণেই এমনটা হবে। তার কিছুটা প্রভাব অবশ্য চলতি ২০২১ অর্থবছরেও পড়েছে। এরপরও, আমাদের সর্বনিম্ন অনুমানেও অর্থনীতিতে ভাইরাস সৃষ্ট কারণে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।
ভাইরাস স্বল্পমেয়াদে পিছিয়েছে, প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাই জয়ী হবে:
অবশ্য অন্যান্য ঝুঁকি রয়েছে। যেমন; স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র পরিচালিত পোশাক উৎপাদনের কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত প্রভাবিত হতে পারে। গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত অনেক অদক্ষ শ্রমিকের জীবিকা বিপন্ন করতে পারে এ প্রবণতা।
এছাড়া, মহামারি স্বল্প-মেয়াদি কিছু বাহ্যিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। যার মধ্যে অন্যতম হবে; বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ কমে যাওয়া। এরসঙ্গে গার্মেন্টস খাতের প্রভাবটি এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, দেশটির রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই এখান থেকে আসে। এগুলো যদি উৎপাদনশীলতার লাগাম টেনে ধরে, তাহলে সার্বিকভাবেই অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে।
সরকারি দেনার সঙ্গতিপূর্ণ অবস্থান বাংলাদেশকে নানা আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা ও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। এতে স্বল্প-মেয়াদি বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সাহায্য পাচ্ছে সরকার।
আমাদের মৌলিক পর্যবেক্ষণ বলে, শেখ হাসিনার সরকার সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বেশকিছু অগ্রগতি অর্জন করবে। নারী ক্ষমতায়ন, আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপন এবং নতুনভাবে প্রণীত মূসক ব্যবস্থার সংস্কার এজন্য সহায়ক হতে পারে।
তাছাড়া, কাঠামোগত সংস্কারের সুবাদে- সহজে ব্যবসা করার সুবিধা দেশটির অর্থনীতির জন্য যোগ করতে পারে আরও ইতিবাচক দিক।
(সংক্ষেপিত)
- সূত্র: ব্লুমবার্গ
- লেখক: ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্সের হয়ে ভারতীয় অর্থনীতি বিষয়ক বিশ্লেষণ করেন। তিনিই ইতোপূর্বে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক ডিএসপি মেরিল লিঞ্চের একজন গবেষণা বিশ্লেষক হিসেবেও কাজ করেছেন।