ভাষা শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাবনত জাতি
মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে যারা পুলিশের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন বাংলা মায়ের সেই সব সাহসী সন্তানদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করছে বাংলাদেশ।
আজ থেকে ৬৯ বছর আগের এই দিনে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার রাজপথ হয়ে উঠেছিল উত্তাল। পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমে আসে ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ। বসন্তের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তারা বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তোলে, 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'।
মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তাদের রক্তের স্রোতধারায় এর চার বছরের ব্যবধানে বাংলা স্বীকৃতি পায় পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার।
একুশের শহীদদের এই আত্মদান নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সরদার ফজলুল করিম তার 'বায়ান্নরও আগে' প্রবন্ধে লিখেছেন 'বরকত, সালামকে আমরা ভালবাসি। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা বরকত সালাম আমাদের ভালবাসে। ওরা আমাদের ভালবাসে বলেই ওদের জীবন দিয়ে আমাদের জীবন রক্ষা করেছে। ওরা আমাদের জীবনে অমৃতরসের স্পর্শ দিয়ে গেছে। সে রসে আমরা জনে জনে, প্রতিজনে এবং সমগ্রজনে সিক্ত'।
৫২'র এই আত্মত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এরপর ১৯ বছর বাঙালীরা লড়াই করেছে পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের নয় মাসের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে সারা বিশ্বেই পালিত হচ্ছে দিবসটি।
মহান শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অন্যান্য বছরের মতো এবার একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বশরীরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেননি। তাদের পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করো হবে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সকল উপাসনালয়ে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ ৫ জন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসাথে সর্বোচ্চ ২ জন শহীদ মিনারে পুষ্পস্পবক অর্পণ করতে পারবেন। শহীদ মিনারের সকল প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। মাস্ক পরা ব্যতিরেকে কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।