ভোলায় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, আসামি পাঁচ হাজার
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পুলিশ-এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (২০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে বোরহানউদ্দিন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবিদ হোসেন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হক বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এ মামলা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সনাতন ধর্মের এক যুবকের কথিত হ্যাক করা ফেসবুক আইডি থেকে নবী করিম (সা:) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ হয়। রোববার (২০ অক্টোবর) এ ঘটনা ঘটে।
ভোলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শেখ সাব্বির হোসেন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন চিকিৎসাধীন। পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করেছে। সমাবেশস্থলসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সংঘর্ষে আহত ৪১ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ও ৩০ জনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বাকিদের বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের টহল জোরদার করার পর বিকেল থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে শুরু করে।
এ ঘটনায় ভোলা জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মামুদুর রহমানকে প্রধান করে রোববারেই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
প্রসঙ্গত, রোববার (২০ অক্টোবর) সংঘর্ষের ঘটনার পরের দিন আজ (সোমবার) জেলা স্কুল মাঠে ‘সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয় ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। ছয় দফা দাবি নিয়ে এই কর্মসুচি ঘোষণা করে তারা।
দাবিগুলো হচ্ছে- ছয় দফা দাবি হলো: ১. জেলা ও থানা থেকে এসপি এবং ওসিদের প্রত্যাহার করতে হবে
২. ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করার অনুমতি দিতে হবে
৩. আহত লোকজনের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে
৪. নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে
৫. অভিযুক্ত বিপ্লব চন্দ্র শুভর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ফাঁসি দিতে হবে এবং
৬. গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে
ধর্ম ভিত্তিক সংগঠনটির ভোলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান জানান পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশটি করার কথা ছিল তাদের।
‘নিরাপত্তার জন্য’ ভোর থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছেন বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম।
অপরদিকে, সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় ‘সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ’ নেতৃবৃন্দ ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন ইসলামি আন্দোলনের আতাউর রহমান।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা স্কুল মাঠে কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
এছাড়া, ভোর থেকেই জেলা শহরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশনস ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) ও পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে।
এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য সব সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, ফেসবুকের এক আইডি থেকে মহানবী (স.) কে উদ্দেশ্য করে করা কথিত ‘কটুক্তি’র জের ধরে রবিবার (২০ অক্টোবর) তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ডাকা হয়। পরে পুলিশ এসে সমাবেশ তাড়াতাড়ি শেষ করার নির্দেশ দিলে ঘটনাস্থলে গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে ৪ জন নিহত হন এবং আহত হন প্রায় শতাধিক।