ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ নিয়ে এখনই ভাবছে না বাংলাদেশ
দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরুর সাত মাস পেরিয়ে গেছে। প্রথম দিকে ভ্যাকসিন নেওয়া অনেকেরই অ্যান্টিবডি এরইমধ্যে কমতে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা না থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্ক, কোমর্বিড রোগীসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু দেশ।
তবে বাংলাদেশ টার্গেটেড জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার আগে বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা ভাবছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে এখনো আমাদের কোনো ভাবনা নেই। এ বিষয়ে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি কমিটি বা ডব্লিউএইচও এখন পর্যন্ত কোনো পরামর্শ বা নির্দেশনা দেয়নি। আমরা এখনো টার্গেটেড পপুলেশনকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারিনি। তাই এখন কীভাবে বুস্টার ডোজ দেব? তবে ৮০% পপুলেশনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর আমরা বুস্টার ডোজের বিষয়ে ভাবব।'
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দিয়ে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত দেশে করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২১.৫% ও পূর্ণ ভ্যাকসিনেটেড হয়েছেন ১০.৮ % নাগরিক।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রায় ৫০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে শনিবার মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বুস্টার ডোজ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'দেশে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী। তারা এখন পর্যন্ত বুস্টার ডোজের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। যদি কখনো প্রয়োজন হয়, তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব।'
ভ্যাকসিন নেওয়ার ৬-৭ মাসের মধ্যে অ্যান্টিবডি কমে যাওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। সে কারণেই বিভিন্ন দেশ বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষায় ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রও বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫.৭% নাগরিক প্রথম ডোজ ও ৫৬.৭% নাগরিক দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলে ৬৭% এক ডোজ ও ৬৫% মানুষ দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন।
দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হওয়ার পর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়া ৫০০ জনের ওপর এক গবেষণা করেন অ্যান্টিবডি গবেষক এবং শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী ডা. আশরাফুল হক। সে সময় গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দুই ডোজ যারা গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্য অ্যান্টিবডি তৈরির হার শতভাগ।
ডা. আশরাফুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়ার ৬ মাস পর দেখা গেছে তরুণদের মধ্যে অ্যান্টিবডি প্রটেকটিভ লেভেলে রয়েছে। কিন্তু যারা কোমর্বিডিটি, বিশেষ করে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, ডায়বেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, তাদের অ্যান্টিবডি লেভেল অনেক কমে গেছে। সেজন্য ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে কোমর্বিড রোগীদের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ফেব্রুয়ারিতে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা মূলত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন পেয়েছেন। এখন দেশে সিনোফার্ম ও ফাইজারের ভ্যাকসিন সহজলভ্য। তাই বাংলাদেশে বুস্টার ডোজ দিতে হলে ভ্যাকসিন মিক্সআপ করতে হবে, তার জন্য মিক্সআপ ট্রায়াল দিতে হবে। তবে মিক্সআপের অথরাইজেশন এখনো নেই, তাই দেশে বুস্টার ডোজ দিতে ভ্যাকসিন সংকট রয়েছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শনিবার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিশিল্ডের কেনা ভ্যাকসিনের ১০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে। এসব ভ্যাকসিন চলমান ভ্যাকসিনেশনের আওতায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।