মহামারির জরা কাটিয়ে নতুন বছরের শুভেচ্ছা
মহাকালের অতলে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর ২০২০। বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়ানো করোনাভাইরাস মহামারির এ বছরটি হয়তো অনেকে ভুলেই যেতে চাইবেন। সেই চাওয়া এবং ভিন্ন ও ভালো কিছু পাওয়ার আশায় আজ শুরু হলো খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২১। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
২০১৯ সালের শেষ দিকে দেখা দেয়া করোনাভাইরাস সদ্য সমাপ্ত বছরে পুরো পৃথিবীকেই করে দিয়েছিল পঙ্গু। এখনও তা বহাল তবিয়তেই রয়েছে। তবে আশার কথা হলো ভাইরাস রোধে বিভিন্ন দেশে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে মানুষজন শিগগিরই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হবে।
ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অন্যান্য বছরের মতো এবার জনসমাগম করে দেশে নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানানোর ওপর ছিল নিষেধাজ্ঞা। তারপরও রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঝরাতে মানুষজন বাড়ির ছাদে আতশবাজি ফুটিয়ে এবং ফানুস উড়িয়ে বরণ করে নিয়েছে ২০২১ সালকে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও মহামারিতে কঠোরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনীতির চাকা বলতে গেলে প্রায় থেমেই গিয়েছিল। তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে দেশ এখন পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০২১ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়ে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, 'নতুনকে বরণ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিষ্টীয় নববর্ষ তাই জাতীয় জীবনে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। প্রতিবছর নববর্ষকে বরণ করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন করা হলেও করোনা মহামারির ফলে এবার উৎসবের আমেজ অনেকটাই ম্লান।'
বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের জন্য ২০২১ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর একটা যুগসন্ধিক্ষণ হচ্ছে ২০২১ সাল। এই যুগসন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে আমাদের নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে। নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। মহামারির ভয়াবহতাকে মোকাবিলা করে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ- নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি।'
নববর্ষে সবার জীবন যেন অনাবিল আনন্দ ও সাফল্যে ভরে উঠে সেই আশা প্রকাশ করেন আবদুল হামিদ।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, 'প্রকৃতির নিয়মেই যেমন নতুনের আগমনী বার্তা আমাদের উদ্বেলিত করে, তেমনি অতীত-ভবিষ্যতের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পুরনো স্মৃতি সম্ভারে হারিয়ে যাওয়ার চিরায়ত স্বভাব কখনও আনন্দ দেয়, আর কখনোবা কৃতকর্মের শিক্ষা নব উদ্যোমে সুন্দর আগামীর পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।'
এ বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নতুন বছরে আমরা একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। করোনা মহামারি বিশ্ববাসীকে এক কঠিন বার্তা দিয়েছে। যতই উন্নত হোক না কেন, একা কোনো দেশ শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই যে কোনো বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। আমাদের সকলকে এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি তারুণ্যের শক্তি ও প্রযুক্তিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্বে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।'
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে ধর্মীয় উগ্রবাদসহ যে কোনো সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রতিজ্ঞাবন্ধ।
'আসুন আমরা নতুন বছরে প্রতিজ্ঞা করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বির্নিমাণে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করব। নতুন বছর ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে মানুষে-মানুষে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার করুক, সকল সংকট মোকাবিলার শক্তি দান করুক এবং সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি- এই প্রার্থনা করি,' বলেন তিনি।