যেসব স্লোগানে মুখর ছাত্র আন্দোলন!
বাসে হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) ও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই রাজধানীতে চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অংশে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলছে।
গত ২০ নভেম্বর বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেয় ওই বাসের হেল্পার। বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ঐ ছাত্রী তার সহপাঠীদের এ বিষয়ে জানালে ২১ নভেম্বর সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু করে কলেজের ছাত্রীরা। এসময় বিক্ষোভরত ছাত্রীদেরকে 'হাফপাস ভিক্ষাবৃত্তি নয়, এটা আমাদের অধিকার', 'হাফ পাস না দিলে, বাস দেখি কেমনে চলে', 'হাফ ভাড়া দেওয়ায় ধর্ষণের হুমকি, লজ্জিত বাংলা' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। এছাড়া, কয়েকটি বাসে 'হাফ পাস চলবে' লিখে দেয় শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি ডিজেলের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ সরকার। এরপর থেকেই পরিবহন শ্রমিকদের দাবি রক্ষায় বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়। ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফপাস নেওয়াও বন্ধ করে দেয় বাসগুলো।
বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রীরা মূলত হাফপাসের দাবিতে বিক্ষোভ করলেও বাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়েও স্লোগান দিতে দেখা যায়। 'নিরাপত্তা কোথায়?' লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায় অনেককে।
এ ঘটনার ৩ দিন পরই, ২৪ নভেম্বর সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন রাজধানীর নটরডেম কলেজের এক ছাত্র। মানবিক বিভাগের ছাত্র নাঈম হাসান আগামী বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেদিনই রাজধানীর গুলিস্তান মোড় অবরোধ করেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এরপর দিন (২৫ নভেম্বর) মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর ও পল্টনের মতো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদেরক 'ডিজিটাল বাংলাদেশ চাই না, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই' লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায়। এছাড়া, 'রক্তের কি দাম নেই?', 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?', 'যদি তুমি চুপ থাকো তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ'- লেখা স্লোগানে বর্তমানে মুখরিত ঢাকার মহাসড়ক।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যেন ২০১৮ সালের আন্দোলনেরই পুনরাবৃত্তি। সে বছর বাস চাপায় রাজধানীর রমিজউদ্দীন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে চলে বিক্ষোভ আন্দোলন। ৩ বছর আগের ঐ আন্দোলনে ব্যবহৃত 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' প্ল্যাকার্ড নিয়ে এবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা।
তবে এখানেই শেষ নয়। ২৯ নভেম্বর রাতে অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের নিচে পিষ্ট হয়ে রামপুরা বাজারের চা দোকানি এবং ছাত্র মাইনুদ্দিন নিহত হয়। এ বছর রামপুরার একরামুন্নেসা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন তিনি। ঘটনার রাতেই বিক্ষুব্ধ জনতা রামপুরা এলাকায় ১৩ টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এদিকে, মাইনুদ্দিনের মৃত্যুতে চলমান এই আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
'ভাই হত্যার বিচার চাই', 'সড়কে প্রাণনাশ, বাংলাদেশের সর্বনাশ', 'দেশ কেন ডুবে বিষে, দেশের মেধা এদেশে রাস্তায় পিষে'- লেখা প্ল্যাকার্ডে আজও রামপুরা ব্রিজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
টানা ১৩ দিনের আন্দোলনের মুখে রাজধানীর বাসে তাদের জন্য হাফপাস চালু হলেও শিক্ষার্থীরা তাদের দেওয়া ৯ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।