যে জনপদে কোনো মেয়রই পূর্ণ মেয়াদে থাকে না!
গাজীপুরবাসীর দুর্ভাগ্য, এপর্যন্ত তাদের কোনো মেয়রই মেয়াদ পূরণ করতে পারলেন না। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র গাজীপুরে রাজনৈতিক কারণেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মেয়রদের আসা-যাওয়ার পালা লেগেই আছে।
২০১৩ সালে ১৬ জানুয়ারি গাজীপুরকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করে সরকার। ওই বছরেই প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এবং সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারান তিনি।
কিন্তু, শুরু থেকেই তার মেয়াদ ছিল টালমাটাল। সবমিলে প্রায় ১৮ মাস দায়িত্ব পালন করতে পারেন তিনি। এরপর দুর্নীতি ও নাশকতায় সম্পৃক্ততাসহ তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে মামলা করা হয়। ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হরতাল-অবরোধে নাশকতার অভিযোগে পুলিশের করা একটি মামলায় গ্রেফতার হন গাসিক এর প্রথম মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এ উপদেষ্টা।
২০১৫ সালের ১৯শে আগস্ট তাকে প্রথম দফায় বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্ত হন ওই বছরের ১৮ই এপ্রিলে। এরপর সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৮ মাস পর মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১১ কার্য দিবসের মাথায় তৃতীয় দফায় আবারো বরখাস্ত হন মান্নান।
গত বছরের নভেম্বরে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ সৈয়দ কামাল হোসেনের আদালত অর্থ আত্মসাতের মামলায় মান্নানকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডেরর আদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনের ৩ মাস পর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ৪৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হন।
মেয়র মান্নানের অনুপস্থিতিতে তিনিই ৩ বারে প্রায় আড়াই বছর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিক থেকে তিনি সৌভাগ্যবান, নির্বাচিত মেয়র না হয়েও তার কাঁধেই উঠেছে গাসিকের নগরপিতার দায়িত্ব।
২০১৮ সালের নির্বাচনে গাজীপুরের দ্বিতীয় নির্বাচিত মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
কিন্তু, মেয়াদ পূরণের ভাগ্য তারও হয়নি। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি কটূক্তির অভিযোগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গত ৩ নভেম্বর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
এরপর গত ১৯ নভেম্বর আ. লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও আ. লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এই সিদ্ধান্তের পর জাহাঙ্গীর আলম ক্ষমাপ্রার্থণা করলেও তাকে আর কোনো ছাড় দেওয়া হলো না। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে তাকে মেয়রের পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
ফলে আবারও গাসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেলেন আসাদুর রহমান কিরণ। নির্বাচিতদের আসা-যাওয়ার পালাবদলে এই নেতাই আবারো নগরপালের ভার সামলাবেন।