রং বদলে চলাচল করছে কার্নেট সুবিধায় আনা ৭০ বিলাসবহুল গাড়ি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কার্নেট নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় আমদানি হওয়া অন্তত ৭০টি বিশালবহুল গাড়ি রং বদলে দেশের রাস্তায় চলাচল করছে। শুল্ক ছাড়া খালাস হওয়ায় এসব গাড়ি কোথায় রয়েছে এর কোন তথ্য নেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে।
এসব গাড়ি উদ্ধারে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পুলিশসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তাও চেয়েছে। কিন্তু এখনো এসব গাড়ি উদ্ধার করা যায়নি। কাস্টমস কর্মকর্তার বলছেন, এসব গাড়ি উদ্ধারে শুল্ক গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চেষ্টা চলমান রয়েছে।
বৃহষ্পতিবার (২১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। কার্নেট সুবিধায় আনা ১১০টি বিলাসবহুল গাড়ির অনলাইন নিলাম উপলক্ষে কাস্টম কমিশনারের অফিসে এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করা হবে।
ফখরুল আলম বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক যারা বিদেশে বসবাস করেন বা বিদেশে নাগরিকত্ব রয়েছে এরকম কিছু লোক ২০১১ এবং ২০১২ সালের দিকে কার্নেট ডি প্যাসেজের আওতায় বাংলাদেশে বিএমডব্লিও, মার্সিডিস বেঞ্জ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, জাগুয়ার, লেক্সাস সহ বিভিন্ন ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে আসে। শর্ত ছিল, টুরিস্ট হিসেবে ৬ মাস এগুলো বাংলাদেশে ব্যবহার করবে। আবার তারা যখন বাংলাদেশ ত্যাগ করবে, তখন এই গাড়ীগুলো ফেরত নিয়ে যাবে। এ সংক্রান্ত অঙ্গীকারনামা দিয়ে গাড়ীগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস দেয়া হয় সেগুলো।
পরবর্তীতে দেখা যায় এদের অধিকাংশই আর ফেরত নিচ্ছেন না। তারা স্থানীয় বাজারে এসব গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে আইনের বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটে। এরপর সরকার শুল্ক বাবদ ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে খালাসের শর্ত আরোপ করে। শর্ত আরোপের পর আমদানিকারকগণ গাড়িগুলো আর খালাস নেননি এবং গাড়িগুলো আর ফেরতও নেননি। তাদের নোটিশ দেওয়ার পরও অধিকাংশই কোন জবাব দেননি। কিছু গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। ফলে গত ৮ থেকে ৯ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে এসব বিলাসবহুল গাড়ি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাস্টম কমিশনার বলেন, গাড়ীগুলো অনেক বছরের পুরোনো। কিছু গাড়িতে চাবি পাওয়া যাচ্ছেনা। অধিকাংশ নামীদামী ব্রান্ডের গাড়ির শুল্ক করের পরিমাণ বেশি। এর আগে চারবার নিলাম হলেও কাঙ্খিত দর না পাওয়ায় গাড়িগুলো বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। বন্দরের জায়গা খালি করা দরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে তৎপর। যে কোনভাবেই হোক গাড়ির বিষয়ে নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। সে জন্য ব্যাপক কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। ক্যাটালগগুলো এনবিআর এবং কাস্টমসের ওয়েবসাইটে, ই-অকশন সফটওয়্যারে ছবি সহ বিস্তারিত বর্ণনা সংযোজন করা হয়েছে। যারা পুরোনো গাড়ি বিক্রির সাথে জড়িত তাদের কাছেও এসব বিজ্ঞপ্তি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জট দূর করা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ যাতে নষ্ট না হয়, যৌক্তিক মূল্য যেখানে পাওয়া যাবে আমরা সেগুলো বিশেষ বিবেচনায় নেব। প্রয়োজনে সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বরাবর উপস্থাপন করে অনুমোদন করিয়ে এ বিষয়ে নিষ্পত্তি করব।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, অনলাইন নিলামের জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দরপত্র এবং ক্যাটালগ সংগ্রহ করা যাবে। নিলাম ক্রেতাদের আগামী ২৭, ২৮, ৩১ অক্টোবর এবং ২ নভেম্বর গাড়ীগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে পরিদর্শন করতে হবে। অনলাইনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়, মংলা কাস্টম হাউস, কাস্টম এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা এবং সিলেট রক্ষিত টেন্ডার বক্সে দরপত্র জমা দিতে পারবে।