রমজানে রাতেও ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
রোজা রেখে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে মানুষের মধ্যে। ধর্মীয় নেতারা বলছেন, রোজা ভাঙ্গার সাথে ভ্যাকসিন নেয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে ধর্মীয় অনুভূতির কারণে অনেকে রোজা রেখে ভ্যাকসিন দিতে না চাইলে তাদের জন্য রাতে ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রোজার সাথে ইনজেকশনের কোন সম্পর্ক নেই। রোজা রেখেও অনেকে ইনসুলিন নেয়। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু ধর্মীয় তাই অনেকের রিজার্ভেশন থাকে। কেউ যদি রোজা রেখে ভ্যাকসিন নিতে না চায় তাহলে তাদের জন্য রাতে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে'।
মুজাহেরুল হক বলেন, উপজেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে সব হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তাই চাইলেই ইফতারের পরও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালানো সম্ভব। ভ্যাকসিন নিতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। কোনোভাবেই মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে অনুৎসাহিত করা যাবেনা।
তিনি বলেন, 'এক মাসের জন্য সান্ধ্যকালীন ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে দিনের ভ্যাকসিন কার্যক্রম সকাল আটটার পরিবর্তে কিছুটা দেরিতে শুরু করতে হবে। মাঝে বিরতি দিয়ে সন্ধ্যার পর আবার ভ্যাকসিন দিতে হবে। এটি সম্ভব'।
মানুষের জন্য রাতে ভ্যাকসিন নেয়ার ব্যবস্থা যাতে করা হয় সেজন্য সরকারকে টেকনিক্যাল কমিটি পরামর্শ দেবে বলেও জানান তিনি।
৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন ৩৬,৮২, ১৫২ জন। দেশজুড়ে ১,০০৫টি কেন্দ্রে টিকাদান চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো ব্যতীত, ২,৪০০ টি টিম সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নাগরিকদের টিকা প্রদানে কাজ করছেন।
এদিকে রমজানে ভ্যাকসিন গ্রহণে মানুষের উদ্বেগের কথা বিবেচনা করে ব্রিটিশ ইসলামিক মেডিকেল গ্রুপগুলো জানিয়েছে যে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণে মুসলিমদের রোজা ভঙ্গ হবে না। খবর আল আরাবিয়া নিউজের।
এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ ইসলামিক মেডিকেল এসোসিয়েশন জানায়, 'ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের ফলে রোজা ভঙ্গ হবে না। রোজার জন্য কারোরই ভ্যাকসিন গ্রহণে বিলম্ব করা উচিত নয়।"
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি ফারুক আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'রোজা রেখে ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়ে ধর্মীয় কোন বিধি-নিষেধ নেই। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক আছে। রমজান মাসে মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করতে কি ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে সে বিষয়ে সেদিন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইসলামী ফাউন্ডেশন সারা দেশের মসজিদে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করবে'।
প্রথিতযশা ভাইরোলজিস্ট এবং করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'ভ্যাকসিন নেয়ার বিষয়ে ধর্মীয় নেতারা কি বলেন তা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। রোজার মধ্যে দিনের বেলা যারা ভ্যাকসিন নিতে রাজি নয় তাদের জন্য রাতে ভ্যাকসিন নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রাতেও সব সরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম চলে তাই রাতে ভ্যাকসিন দিতে সমস্যা হবেনা'।
রমজান মাসে মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করতে ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে এখন কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম টিবিএসকে জানান, 'রোজার মাসে ইনসুলিন নিতে যদি কোন অসুবিধা না থাকে তাহলে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতেও অসুবিধা নেই। আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাথে এরইমধ্যে কথা বলেছি। তারা ইমাম, মোয়াজ্জিনসহ ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করবে। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে মিটিং আছে'।
অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, 'এরইমধ্যে সৌদি সরকার জানিয়েছে যারা হজ্জে যাবেন তাদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। এ কথাগুলোও মানুষকে বোঝানো হবে। রমজান মাসে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলমান রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা কেবিনেটকেও রমজান মাসের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের বিষয়ে জানিয়েছি। কেবিনেট ডিসি-এসপিদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিবে'।