রাজাকার টিপু সুলতানের ফাঁসি
রাজশাহীর বোয়ালিয়ার রাজাকার আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৪১তম রায়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা এবং স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের ওপর হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, লুণ্ঠন ও নির্যাতনের অভিযোগ ছিল টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন। ১৭৭ পৃষ্ঠা রায়ের সারাংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুল।
আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি ও তাপস কান্তি বল। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।
এর আগে গত ১৭ অক্টোবর রাষ্ট্র ও আসামী পরে যুক্তিকর্ত উপস্থাপন সমাপ্তির মাধ্যমে বিচারকাজ শেষ হলে সিএভি (রায়ের জন্য অপেক্ষমান) রাখার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, লুণ্ঠনের অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দুজনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে পাওয়া যায়।
তবে ছয় আসামির মধ্যে রাজাকার মনো, মজিবর রহমান, আব্দুর রশিদ সরকার, মুসা রাজাকার ও আবুল হোসেন মারা গেছেন।
২০১৮ সালের ২৯ মে জামায়াতের সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় টিপু সুলতান জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ পরবর্তীকালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে অবসরে যান তিনি।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে বলে জানিয়েছে আসামীর আইনজীবী গাজী তামিম।