রেস্তোরাঁয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর ধর্মঘটের ডাক সিলেটে
সিলেট নগরীর তিনটি রেস্তোরাঁয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর বুধবার সকাল ৬টা থেকে জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকরা।
তারা বলছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে মালিকদের হয়রানি বন্ধ না হলে বুধবার সকাল থেকে বন্ধ থাকবে সিলেট জেলার সব ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ। অভিযানে সিলগালাকৃত রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার এবং আটক কর্মচারীদের মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আজ মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জিন্দাবাজার এলাকার ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টকে সিলগালা এবং পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং পচা-বাসি খাবার পরিবেশনের দায়ে এ দণ্ড দেয়া হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
ভোজনবাড়িতে অভিযান শেষে তিনি বলেন, 'এখানে অভিযানে এসে আমরা খাদ্যের মানে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছি। তাছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন নেই, খাবার পরিবেশনের বৈধ কাগজপত্র নেই। সব কিছু মিলে আমরা সাময়িক সময়ের জন্য রেস্টুরেন্টটি বন্ধ করে, তাদেরকে সময় দিয়েছি। আপাতত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেস্টুরেন্টের দুইজনকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।'
অন্য দুই রেস্তোরাঁয় অভিযানের পর তিনি বলেন, 'এসব রেস্টুরেন্টে পূর্বে একাধিকবার অভিযান চালালেও কোনো কাজ হয়নি। অভিযানকালে রেস্টুরেন্টগুলোতে এমন অনেক খাদ্য পেয়েছি যেগুলো দুই থেকে তিন দিন আগের।'
এ অভিযানের পর সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির হল রুমে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, চেম্বার সভাপতি এটিএম শোয়েব এবং সিলেট রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি ও সিলেট ক্যাটারার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বুধবার সকাল থেকে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয় বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন সিলেট ক্যাটারার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শান্ত দেব।
তিনি জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে ম্যানেজার ও সুপারভাইজারকে আটক করা হয়। এ ছাড়া পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টকে ৮০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
শান্ত দেব বলেন, 'লকডাউন শেষ হলেও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে ভ্যাট ও ট্যাক্সের বোঝা। রেস্তোরাঁ ব্যবসা যখন ধুঁকছে তখন অভিযানের নামে রেস্টুরেন্ট মালিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। কোনো রেস্টুরেন্টে সমস্যা থাকলে জরিমানা হতে পারে। কিন্তু সিলগালা করার বিধান নেই। এতে বোঝা যায় রেস্টুরেন্ট মালিকদের হয়রানি করতে এরকম অভিযান করা হচ্ছে।'
তিনি আরও জানান, অভিযান বন্ধ, সিলগালাকৃত রেস্টুরেন্ট খুলে দেয়া ও আটক কর্মচারীদের মুক্তির দাবিতে বুধবার থেকে সিলেটের সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। বুধবার সকালে রেস্টুরেন্ট মালিক ও কর্মচারীরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাবে।
রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে এর সঙ্গে জড়িত হাজারো মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ:
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে বিকেল পৌনে ৫টা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত জিন্দাবাজারে সড়ক অবরোধ করে রাখে রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকরা। এ সময় জিন্দাবাজার সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।
'প্রশাসনের আশ্বাসে' সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যান রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকরা। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান, রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকরা সড়ক সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাদ দেন। তারপর তারা সড়ক থেকে সরে যান।