রোগীর সেবায় ঈদ আনন্দ বিসর্জন চিকিৎসক-নার্সদের
মহামারি কালে নিজেদের আনন্দ খুশিকে বিসর্জন দিয়েছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। করোনা রোগীদের সেবা করেই কাঁটছে- ঈদের দিন। এসব খুশি মনেই মেনে নিয়েছেন চিকিৎসক ও দায়িত্বরত নার্সরা। বলছেন: এর মাঝেই আনন্দ খুঁজে নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেবা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে হাসপাতালেই।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে- অনেক দিন ধরে। আজ (শনিবার) ঈদের দিনেও হাসপাতালে রোগী আছেন ১২০ রোগী জন। এর মধ্যে ৩০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, আর বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মানস কুমার মন্ডল। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তিনি হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
তিনি বলেন, ''ঈদের ছুটিও কাঁটাতে পারেনি অনেক চিকিৎসক। ফিরতে পারেনি নিজ গ্রামে বা পরিবারের সঙ্গে। বৈশ্বিক এই ক্রান্তিকালীন সময়ে এটা চিকিৎসকরা মেনে নিয়েছেন। নিজেদের হাসি-খুশি, আনন্দকে বিসর্জন দিয়েছেন মানুষের সেবায়। সকালে হাসপাতালে রাউন্ড দিয়েছি। দেখেছি রোগীদের কি অবস্থা।''
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫ জন চিকিৎসক, ৩০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ৪০ জন নার্স করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে থাকা রোগীদের সেবা করছেন।
'চিকিৎসক ও নার্সরা হাসপাতালেই খাওয়া-দাওয়া করছেন,' জানালেন ডা. মানস।
তিনি আরও বলেন, ''করোনা প্রার্দুভাব শুরুর পর থেকেই চিকিৎসার দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের হাসপাতালেই খাবারের ব্যবস্থা করেছি। ঈদের দিনও সবাই হাসপাতালেই খাচ্ছে। আজ সকালের ডাক্তার ও নার্সরা নাস্তা খেয়েছে নুডুলস আর সেমাই। দুপুরে খাসির মাংস, পোলাও, ডাল, দই, স্প্রাইট। রাতে মুরগির মাংস ও ভাত। এভাবেই চলছে করোনাকালীন সময়ে ডাক্তারদের জীবন।''
ঈদের দিনে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন হাসপাতালের নার্স মুসলিমা খাতুন।
তিনি জানান, 'আমাদের এখন ঈদ নেই। আমরা ছুটি নিয়ে ঈদ কাঁটাতে গেলে রোগীর সেবা ব্যাহত হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বিশেষ করে করোনা মহামারির এই সময়ে নার্সরা নিজের আনন্দ, পরিবারের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে- রোগী সেবার কাজ করছেন। ঈদের দিনও ডিউটি করছি। একটু খারাপ লাগলেও সেটা মেনে নিয়েছি।'
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সারাদেশের সঙ্গে সাতক্ষীরায়ও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানুষদের অসাবধানতা ও অচেতনতাই এজন্যে অনেকাংশে দায়ী। ঈদের দিনও চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা ডিউটি করছেন। পরিবারের সঙ্গে সময় দিতে পারছেন না এটা কষ্টদায়ক বটে, তবে দূর্যোগকালীন সময়ে মানুষদের কথাও ভাবতে হবে, দেশের কথা ভাবতে হবে। এসব ভাবনা নিয়েই কোন প্রকার কষ্ট ছাড়াই চিকিৎসক ও নার্সসহ, সবাই সেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জড়িতরা সেবার কাজ চালিয়ে যাবে।