লকডাউনের মধ্যে থেমে নেই করোনা পরীক্ষা, রোগীদের দীর্ঘ সারি
দেশব্যাপী চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যেও করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রোগীদের করোনা পরীক্ষার জন্য ভিড় বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ এবং রাস্তায় গাড়ি চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন করোনা পরীক্ষা করতে আসা রোগীরা।
তবে অনলাইনে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেওয়ার আবেদন ফরম পূরণ করলে টেস্টের সম্ভাব্য একটা সময় দেওয়ার কারণে রোগীদের ভোগান্তি কমেছে অনেকটা।
গতকাল (শনিবার) বেতার ভবনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনা ল্যাবে সকাল থেকে দেখা যায় করোনা টেস্টের জন্য নমুনা জমা দিতে আসা রোগীদের ভিড়। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে নমুনা জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকলেও হাসপাতালে এসে নমুনা জমা দেওয়ার জন্য ৪০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদেরকে।
মালিবাগের বাসিন্দা সৈকত হোসেনের গত ৫ দিন ধরে করোনার উপসর্গ থাকায় সকালে রিক্সায় করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা পরীক্ষার বুথে নমুনা দিতে আসেন। একদিন আগে অনলাইনে আবেদন করার পরে শনিবার সকাল ১১ টায় সময় দেওয়ায় তিনি তার আগেই এসে অপেক্ষা করেন। ততক্ষণে প্রায় ২৫ জনের লাইন তৈরী হয়ে গিয়েছিল নমুনা সংগ্রহের বুথের সামনে।
সৈকত টিবিএসকে বলেন, 'অনলাইনে আবেদন করে এসেও ১ ঘন্টার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। এদিকে লকডাউনের কারণে তিনবার রিক্সা পরিবর্তন করে মালিবাগ থেকে আসতে হয়েছে। টাকাও খরচ হচ্ছে আবার ভোগান্তিও'।
মিরপুর থেকে মেয়েকে নিয়ে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নিতে আসা সালমা বেগম বলেন, 'আমার মেয়েকে কেমো দিতে হয় তাই এর আগে ১১ বার টেস্ট করিয়েছি কখনও রিপোর্ট পেতে দেরি হয়নি। এবার দেরি হচ্ছে রিপোর্ট পেতে'।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা এবিএ ওয়াহিদ খানের স্ত্রীর করোনা পজেটিভ এসেছে। দুই মেয়েকে নিয়ে নমুনা দিতে এসেছিলেন তিনি। টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের সময় দেওয়া ছিল ১১-১২ টা। এর মধ্যেই নমুনা দিতে পেরেছি। ওদের মায়ের পজেটিভ কিন্তু আমার নেগেটিভ তাই মেয়েদেরও টেস্ট করিয়ে নিচ্ছি। তবে বাসা থেকে আসতে লকডাউনের কারণে একটু ভোগান্তি হয়েছে। প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে সিএনজিতে এসেছি'।
তিনি আরও বলেন, 'অন্তত লকডাউনের মধ্যে যদি বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা টেস্ট করানো হতো তাহলে আমরা এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতাম'।
আবার অনেকে অনলাইনে আবেদন করতে গিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করতে না পারায় দু'দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে উল্লেখ করে সবুর খান টিবিএসকে বলেন, '৩/৪ দিন ধরে লক্ষণ থাকায় অনলাইনে আবেদনের চেষ্টা করি নমুনা জমা দেওয়ার জন্য। জরুরী দরকার সত্ত্বেও দুই দিন পরে আবেদন করে আজ (শনিবার) দিতে পারলাম'।
রিপোর্ট নিতে আসা মনির হোসেন টিবিএসকে বলেন, '১৪ তারিখে নমুনা জমা দিয়ে গিয়েছি তখন তেমন ভিড় ছিল না কিন্তু আজ (শনিবার) মানুষের চাপ অনেক বেশি'।
নমুনা সংগ্রহকারী মো. সাইফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'করোনা টেস্টের জন্য নমুনা জমা দিতে আসা লোকজনের চাপ কয়েকদিন ধরে বাড়ছে। আজকে চাপ অন্য দিনের থেকে বেশি'।
বিএসএমএমইউতে ভর্তি হওয়া রোগীরা সরাসরি ফরম নিবন্ধন করেই টেস্ট করাতে পারছেন বিএসএমএমইউ এর করোনা ল্যাবে।
বিএসএমএমইউতে ভর্তি থাকা ছেলে সিয়ামের কোভিড টেস্ট করতে আসা ইকবাল হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'ডাক্তার কোভিড টেস্ট করাতে দিয়েছেন তাই সরাসরিই ফরম পূরণ করে টেস্ট করাতে আসলাম। আবার অনলাইন সম্পর্কেও আমি তেমন বুঝি না। সরাসরি হওয়ায়ই আমার জন্য ভালো হয়েছে'।
এদিকে পর পর দুদিন দেশে করোনায় ১০১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৩ জন। ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৬ হাজার ১৮৫ জনের।
এ পর্যন্ত দেশে মোট ৭ লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ হাজার ২৮৩ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৮ হাজার ৮১৫ জন।
এ পর্যন্ত মোট ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।