শত যুবকের স্বেচ্ছাশ্রম: নদী ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ
অনেক আগে থেকেই নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৬নং কাদিরপাড়া ইউনিয়নের দোরাননগর মধ্যপাড়া গ্রামটি। শত শত একর জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ বছর বর্ষা আসার আগেই শুরু হয়েছে এ ভাঙন। এখন প্রয়োজন বাঁধ নির্মাণের। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার শ্রমিকের বড়ই সংকট। তাই এলাকার যুবকদের নিয়ে গঠিত সংগঠন 'আমরা স্বপ্নবাজ' স্বেচ্ছায় নিজেদের অর্থায়নে ও নিজ শ্রমে গ্রামকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য শুরু করেছে বাঁধ নির্মাণ।
নদী ভাঙন রোধে এখন প্রতিদিন প্রায় ১০০ যুবক প্রত্যক্ষভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজে অংশ নিচ্ছেন। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে যুবকেরা ব্যতিক্রমধর্মী এবং অনুকরণীয় এই উদ্যোগ গ্রহণ করায় এলাকাবাসী তাদের উৎসাহ দিতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
'আমরা স্বপ্নবাজ' সংগঠনের সভাপতি অসীম কুমার মন্ডল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর। তাই নদী ভাঙনের হাত থেকে গ্রাম রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণ করার জন্য আমরা এলাকার যুবকেরা নিজেদের অর্থে বেশ কিছু বাঁশ কিনেছি। তাছাড়া এলাকায় যাদের বাঁশঝাড় আছে, তাদের কাছ থেকেও বাঁশ নিয়েছি। এভাবে তিন শতাধিক বাঁশ জোগাড় করেছি। আবার যাদের বাঁশ নেই, তাদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করেছি।
তিনি আরও বলেন, আধা কিলোমিটারের মধ্যে আমরা ইতোমধ্যে তিনটি বাঁধ নির্মাণ করেছি। আরও অন্তত দুটি বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। কিন্তু নিজেদের অর্থায়নে আর কতই-বা করা যায়!
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অসীম কুমার মন্ডল বলেন, যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের তদারকি করছেন এলাকার বয়স্ক মানুষেরা।
দোরাননগন গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি রণজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, আমাদের এলাকার যুবক ছেলেরা যা করছে, তা এক কথায় অনন্য।
তিনি বলেন, প্রতিবছর গড়াই নদীর ভয়াবহ ভাঙনে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শত শত একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওপারে বালিয়াকান্দি এলাকায় চর পরে নতুন গ্রাম গড়ে উঠছে, আর আমাদের গ্রামের অনেক জমিজমা নিচিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছর মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হলেও অধিকাংশ এলাকা এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারোয়ার জাহান বলেন, জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে আমরা ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।
এলাকার যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের কথা জেনে তিনি তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন।