সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করোনা পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই কম টেস্ট হওয়া নিয়ে অভিযোগ ছিল। এক বছর পর এখন টেস্টের পরিধি বেড়েছে। কিন্তু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ। তাই এখন টেস্টের পরিধি আরও বাড়িয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুরুতে একটি ল্যাবে (আইইডিসিআর) পরীক্ষা হলেও এখন ২২৭টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়। এখন পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি অ্যান্টিজেন, জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে টেস্ট হচ্ছে। তবুও সংক্রমণ বাড়ায় টেস্ট করাতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেককে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিলেও রিপোর্ট পেতে কয়েকদিন সময় লেগে যাচ্ছে।
মানুষ যাতে সহজে টেস্ট করতে পারে এবং টেস্টের পরিধি যেন বাড়ানো হয় সেব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
১ এপ্রিল একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরামর্শক কমিটি জানায়, কোভিড-১৯ এর জন্য টেস্ট করতে আসা মানুষ যাতে সহজে সেবা পায় তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আগামী দিনগুলোতে করোনা টেস্ট করার চাহিদা বাড়তে পারে, সেটি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংক্রমণ বাড়ছে। এখন লক্ষ লক্ষ মানুষকে করোনা টেস্ট করতে হবে। পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি বেশি বেশি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট বাড়াতে হবে। অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হলে পিসিআর টেস্টের ওপর চাপ কমবে আবার খরচও কমবে। এর ফলে পজিটিভ রোগীদের দ্রুত আইসোলেটেড করা যাবে।'
অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, 'লকডাউনের এই সময়ে বেশি বেশি টেস্ট করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেটেড করা গেলে সংক্রমণের ঢেউটা নিচে নামানো যাবে। মানুষকে বোঝাতে হবে আইসোলেশন মানে জেল নয়, বাড়িতে সবার কাছ থেকে নিজেকে আলাদা রাখা। তাই লক্ষণ দেখা দিলে টেস্ট করে নিশ্চিত আলাদা থাকলে সংক্রমণ পরিবারের মধ্যে ছড়াবে না। এবার আমরা একই পরিবারের কয়েকজন সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে এমন তথ্য বেশি পাচ্ছি'।
প্রথিতযশা ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'এখন বিশেষায়িত উপায়ে লকডাউন দিয়ে টেস্ট বাড়াতে হবে। ছোট ছোট এলাকাকে লকডাউন দিয়ে একই রাতের মধ্যে সব মানুষকে টেস্ট করতে হবে। তাদের মধ্যে যাদের পজিটিভ পাওয়া যাবে তাদের আইসোলেটেড করে লকডাউন তুলে দিতে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে পুরো দেশে টেস্ট করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে'।
এখন টেস্ট বাড়ানোর সক্ষমতাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।
তিনি বলেন, 'এখন ২০০'র বেশি পিসিআর ল্যাবে টেস্ট করা হয়। পাশাপাশি অ্যান্টিজেন ও জিন এক্সপার্ট টেস্ট চলমান আছে। সরকারি-বেসরকারি সব ল্যাবে পুরোদেমে টেস্ট করা হলে দিনে ৫০-৬০ লাখ টেস্ট করা সম্ভব হবে। যাদেরই লক্ষণ থাকবে আমারা তাদেরকেই অনুরোধ করছি টেস্ট করে আলাদা থাকতে'।
করোনা সংক্রমণের শুরুতে টেস্টিং কিট সংকট থাকলেও এখন কোন কিট সংকট নেই বলে জানিয়েছেন ডা.আলমগীর।
'কিট আমদানির প্রক্রিয়া চলমান। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত কিট আছে এবং যখনই প্রয়োজন হয় তখনই কিট চলে আসে'।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬৮৩ জনের শরীরে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ২১৩।
গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ ও মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামীকাল সোমবার থেকে দেশব্যাপী এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।