সংরক্ষিত বনের বুক চিরে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ
কক্সবাজারের উখিয়ায় সংরক্ষিত বনের মাঝ দিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। উখিয়ার পালংখালী থেকে ছেপটখালী ঢালার মুখ পর্যন্ত বন বিভাগের মালিকানাধীন সংরক্ষিত বনের বুক চিরে এ রাস্তা নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হলে তাতে বাধা দেয় স্থানীয় বন বিভাগ। এলজিইডি বলছে, সড়কটি দ্রুত তৈরি না হলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তার টাকা ফেরত যাবে।
ইতোপূর্বে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে হাজার হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। সংরক্ষিত বনের বুক চিরে এভাবে রাস্তা তৈরি হলে নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড়, বনভূমি জবরদখল, হাতির বিচরণ ক্ষেত্র ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াসহ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ। তাই সোচ্চার হয়ে উঠেছে পরিবেশবাদি সংগঠনগুলো। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে যাতায়াতের জন্যই বনের মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণের এ উদ্যোগ বলেও অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ার পালংখালী থেকে ছেপটখালী ঢালারমুখ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করে এলজিইডি। ৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা সংরক্ষিত বনের মধ্যে হওয়ায় আপত্তি তোলে বন বিভাগ।
স্থানীয় রশিদ আহমদ, হাকিম উল্লাহ, নুরুল আনোয়ারসহ আরও অনেকেই জানান, বনের মাঝ দিয়ে পায়ে হাঁটার ছোট পথ রয়েছে। এ পথ দিয়ে স্থানীয়রা পাহাড়ে আসা-যাওয়া করে। সেখানে গাড়ি চলাচলের বড় রাস্তা হলে এখানকার বনভূমি ও গাছপালা আর থাকবে না।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের হোয়াইক্যং রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, বন বিভাগের মালিকানাধীন সংরক্ষিত বনের মাঝ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য গাছপালা-ঝোপঝাড় ও মাটি কাটার কাজ শুরু হলে আমরা তাতে বাধা দিয়েছি। বনের মধ্য দিয়ে রাস্তা করার কোনো সুযোগ নেই।
পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, উখিয়া-টেকনাফে এমনিতেই হাজার হাজার একর বনাঞ্চল রোহিঙ্গাদের কারণে ধ্বংস করা হয়েছে। এর উপর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াতের নামে সংরক্ষিত বনের বুক চিরে এভাবে রাস্তা তৈরি করা হলে নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড়, বনভূমি জবরদখল, হাতির বিচরণ ক্ষেত্র ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াসহ উক্ত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহনের আগে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ২০১৮ সাল থেকেই বনের ভেতর দিয়ে পাকা সড়ক করার প্রচেষ্টা চলছে। বন বিভাগের মালিকানাধীন জমিতে বনায়ন ব্যতিত অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত না আসার আগেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সড়কটি বাস্তবায়নে তোড়জোড় করছে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন আগেও পাহাড় কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। বনের মধ্য দিয়ে এভাবে রাস্তা তৈরি হলে তা বনাঞ্চলের জন্য হুমকি। বন সকলের জন্য প্রয়োজনীয়। বাঁচতে হলে বন ও প্রকৃতিকে নিয়ে বাঁচাতে হবে। দেশ ও দশের কথা মাথায় রেখেই আমরা সড়ক নির্মাণে বাধা দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেয়া হয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পালংখালী থেকে ছেপটখালী পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ হাতে নেয় এলজিইডি। সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরু করতে গিয়েই বন বিভাগের বাধার মুখে পড়েছি। বন বিভাগের লোকজন আমাদের স্কেভেটরসহ অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করে নিয়ে গেছে। সড়কটি নির্মাণে বন বিভাগ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সড়কটি দ্রুত তৈরি না হলে এডিবির সহায়তার টাকাগুলো ফেরত যাবে। ফলে আমরা দোটানায় রয়েছি। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সেখানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।