সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের হার বেড়ে ২৮ শতাংশ
গত বছরের তুলনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার ঘটনা ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ হয়েছে। বিষয়টিকে উদ্বোগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস আক্টোবর কর্মসূচি' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সম্মেলনের য়োজন করে 'সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) বিষয়ক জাতীয় কমিটি ২০২১'।
সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) প্রকাশিত 'বাংলাদেশের সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২১' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
মূল গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সংগঠনটির উপদেষ্টা রাশনা ইমাম বলেন, "২০১৯-২০২০ সালে বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা তথ্য চুরি্র ঘটনা বেড়েছে। এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের মতো নতুন অপরাধও শনাক্ত হয়েছে।"
জরিপে সাইবার অপরাধের তুলনামূলক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রথম স্থানে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা, যার হার ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ১৫ দশমিক ৩৫ শাতাংশ। যা প্রায় ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
তবে ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটানা কমেছে। ২০১৯ সালে তা ছিল ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এবার এই সংখ্যা কমে হয়েছে ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ।
সাইবার অপরাধের বয়সবিক্তিক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বেশিরভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ -৩০ বছর যা ৮৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।
সিসিএ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কাজী মুস্তাফিজ বলেন, "সমাজে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় সরকারের পাশাপাশি সব ধরনের সরকারি–বেসরকারি সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদের এই কাজে সম্মিলিতভাবে অংশ নিতে হবে।"
২০০৪ সাল থেকে আমেরিকা, ২০১১ থেকে নরওয়ে এবং ২০১২ থেকে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ অক্টোবরকে 'সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস' হিসেবে পালন করে আসছে। সাইবার দস্যুতা থেকে নিরাপদে থাকতে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি নেওয়া হয় এ মাসে।
১ অক্টোবর থেকে 'সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস'-এর কর্মসূচিকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে প্রথমবারের মতো বেসরকারি উদ্যোগে এবার গঠিত হয়েছে 'সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) বিষয়ক জাতীয় কমিটি ২০২১'।
বিশ্বব্যাপী এই কর্মসূচিতে অক্টোবরের মূল প্রতিপাদ্য বা থিম ছাড়াও চার সপ্তাহে আলাদা প্রতিপাদ্য বা থিম নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী ক্যাম্পেইন বা প্রচারাভিযান হয়। ২০২০ সালের একই প্রতিপাদ্য (ডু ইওর পার্ট, #বি_সাইবার_স্মার্ট) আন্তর্জাতিকভাবে এবারও সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে পরিগণিত হবে। এবার বাংলাভাষীদের জন্য 'সচেতন রই #সাইবার_স্মার্ট_হই' প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় কমিটি। এর ভাবার্থ হলো- সাইবার নিরাপত্তা শুধুই যৌথ দ্বায়িত্ব নয়, এটি প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায়িত্বও বটে।
এছাড়া পুরো মাসের কর্মসূচিকে চারটি সপ্তাহে ভাগ করে বিষয়ভিত্তিক সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে, প্রথম সপ্তাহ (৪-৮ অক্টোবর): সাইবার স্মার্ট হই, দ্বিতীয় সপ্তাহ (১১-১৫ অক্টোবর): ফিশিং প্রতিরোধ, তৃতীয় সপ্তাহ (১৮-২২ অক্টোবর): সাইবার সিকিউরিটিতে ক্যারিয়ার এবং চতুর্থ সপ্তাহ (২৫-২৯ অক্টোবর): সবার আগে সাইবার নিরাপত্তা।
এই চার সপ্তাহে ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান, ওয়েবিনার, কর্মশালা, ক্যাম্পেইনের আয়োজন থাকবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সভাপতি মোহাম্মদ ইকাবাল হোসাইন। ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি'র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক এবং রবির সাইবার সিকিউটি অ্যান্ড প্রাইভেসি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী।