সিনহা হত্যা মামলা: ওসি প্রদীপসহ সব আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন, জামিন নামঞ্জুর
কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের চেকপোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার মামলায় কারান্তরীণ টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ অভিযুক্ত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছেন আদালত।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে চার্জগঠনের আদেশ দেন। একই সময়ে ওসি প্রদীপ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও কনস্টেবল সাগর দেবের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে চার্জগঠনে (বিচার কাজ শুরুর প্রক্রিয়া) ধার্য্যদিন হিসেবে আজ রোববার সকালে ওসি প্রদীপসহ সব আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
কক্সবাজার জেলা কারাগারের প্রিজন ভ্যানে বেলা সাড়ে ১০টায় সিনহা হত্যায় অভিযুক্তদের কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হয়। প্রিজন ভ্যান থেকে আসামিদের নামানোর সময় স্বজনদের কান্নার রুল পড়ে। কঠোর নিরাপত্তায় কাঠগড়ায় তোলা হয় ১৫ আসামিকে।
পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, ২৭ জুন আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলার চার্জগঠনের জন্য ধার্য্যদিন ছিল। সেই মতে, সকালেই আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/১১৪/১২০(খ)/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২৬ থেকে ২৮ জুলাই স্বাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
পিপি আরও বলেন, মামলায় অভিযুক্ত বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, কনস্টেবল সাগর দেব ও বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের পক্ষের আইনজীবীরা ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫(গ) ধারায় মামলার দায় হতে অব্যাহতি ও জামিনের আবেদন করলেও আদালত শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করেন।
সাবেক ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দদুলালের জামিন চেয়ে গত ১০ জুন আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই দিন আদালতে নথি উপস্থাপন না হওয়ায় শুনানি হয়নি। ১৩ জুন এ নিয়ে পুনরায় আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানির জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করেন।
এ মামলায় অভিযুক্ত কনস্টেবল সাগর দেব গত ২৪ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তার জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেছিলেন।
সিনহা হত্যা মামলায় (এসটি-৪৯৩/২১) চার্জগঠন শুনানিতে আসামি পক্ষে আইনী লড়াই করে কক্সবাজার বারের অ্যাডভোকেট দিলীপ দাশ, মহি উদ্দিন খান, মোবারক হোসেন এবং চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, অ্যাডভোকেট চন্দন দাশসহ ১০-১২ জনের একটি আইনজীবী প্যানেল।
রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম ও বাদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাখেদ খান। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়েছে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাবকে। এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
পরবর্তীকালে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের করা মামলার ৩ জন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।
মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ আসামিকে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উক্ত মামলায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপের অন্যতম সহযোগী কনস্টেবল সাগর দেব দীর্ঘ ১১ মাস পলাতক থাকার পর ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর নির্ধারিত দিন হিসেবে চার্জগঠন শুনানিতে সকল আসামিকে আজ আদালতে হাজির করা হয়।