সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা
সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে লাফিয়ে বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন করে এ জেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে ট্রেন চলাচল ও স্কুল-কলেজ ব্যতীত সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, হাট-বাজার সবকিছুই আগের মতো চলছে। বাস-ট্রাক, থ্রি-হুইলার, রিক্সা, বিপনি-বিতান সবকিছু চলছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ মেনে চলার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালালেও মানুষ এতে কান দিচ্ছে না।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জুন লালমনিরহাটে ৪৩ জনের নমুমা পরীক্ষা করে ১৬ জন, ৭ জুলাই ৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নয়জন, ৬ জুন ২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আটজন ও ৫ জুন ৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সাতজন ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।
মহামারির সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন সময়ে এটিই সর্বোচ্চ করোনা শনাক্তের ঘটনা। গত বছর করোনার প্রথম ঢেউ চলাকালে নয়জন এবং বর্তমান দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন সময়ে এখন পর্যন্ত পাঁচজন-সহ মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, ২০২০ সালের গত ২৬ এপ্রিল থেকে চলতি বছরে গত ৮ জুন পর্যন্ত ভারত থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন হয়ে ৩৯৮ জন পাসপোর্টধারী বাংলাদেশির মধ্যে ২০৭ জন করোনা নেগেটিভ ছাড়পত্র নিয়ে দেশে প্রবেশ করেছেন। বর্তমানে ১৯১ জন পাসপোর্টধারী ব্যক্তি বিভিন্ন আবাসিকে কোয়ারেন্টিনে রয়েছে। তবে ৩৯৮ জনের করোনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে আটজন সুস্থ্ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন, অপরদিকে পাঁচজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল প্রথম নমুনা সংগ্রহ করে ১১ এপ্রিল ঢাকা ফেরত রাজমিস্ত্রি কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয়। তার ছেলে সালমান হোসেনকে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ১৪ এপ্রিল নভেল করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ জুন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায় বলেন, "মানুষকে সচেতন করার পরও কেউ যদি অবহেলা করে, সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে কিছু করার বা বলার নেই।
তবে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এখন ঈদ পরবর্তী প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত সমস্যাও যোগ হয়েছে।"
উল্লেখ্য, সিভিল সার্জনের রিপোর্ট মতে এ পর্যন্ত জেলায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, ৬ হাজার ৫১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর পর ৬ হাজার ৩৭১ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে ১ হাজার ১৪১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হলেও সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ১ হাজার ৫৭ জন। এছাড়া ৬৮ জন করোনা পজেটিভ ব্যক্তির মধ্যে ৫৫ জন হোম কোয়ারেন্টিন ও ১৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।