সীমিত পরিসরে সম্পন্ন এবারের 'জলকেলি’ উৎসব
বর্ষবরণ ও পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন বিপুল উৎসাহে সাংগ্রাই বা জলকেলি উৎসবে মাতেন। গতবছর করোনার জন্য এ উৎসব হয়নি। এবার করোনার থাবা এলেও তা থেকে মুক্তির আশায় পারিবারিকভাবে এই উৎসব পালন করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) উৎসবের সমাপনী দিনে একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে পুরনো বছরের সকল দুঃখ, অবসাদ দূর করে নতুন বছরে শুদ্ধ মননে জীবন শুরুর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ। পাশাপাশি আগামী দিনে করোনা মহামারী থেকে মুক্তিলাভ করে সবার জীবনে শান্তি আসুক, আবার মুক্ত বাতাসে যেন প্রাণখুলে নিশ্বাস নিতে পারেন সবাই- এমন প্রত্যাশা ছিল রাখাইন 'জলকেলি'র সমাপনীতে।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, পূর্ব-পশ্চিম মাছ বাজার, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরো পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সবার মাঝে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু হওয়া মানুষের জন্য বিষাদের ছায়া। তবুও অন্ধকারের ঘনঘটা ভেদ করে নববর্ষ বরণে কৃপণতা করেনি কেউ। ছোট শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ শামিল হয় আলোক মিছিলে। আলোক সেই মিছিল যেন ছুঁয়ে গেছে সমুদ্রের বিশাল জলরাশিকেও।
প্যান্ডেলগুলোতে খানিক পর পর রাখাইন তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে জল ছিটিয়ে পুরোনো বছরের হতাশা দূর করে নব আলোকে পথ চলার স্বপ্ন বুনেন।
শহর ছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ, সদরের চৌফলদন্ডী, হ্নীলা চৌধুরীপাড়া, রামু, মহেশখালী, খুরুশকুল, পানিরছড়া, চকরিয়ার মানিকপুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় সপ্তাহজুড়ে রাখাইন নববর্ষ পালনে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়।
রাখাইন যুবারা জানান, আদিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিকভাবে সাংগ্রাই উৎসব (জলকেলি) পালন হয়ে আসছে। তবে এবার করোনার কারণে উৎসব হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে। নববর্ষ উপলক্ষে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি।
গত ১৪ এপ্রিল চন্দন জলে বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এসময় করোনা মহামারী থেকে মুক্তিলাভে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এরপর ১৫ ও ১৬ এপ্রিল পাড়া-মহল্লায় চলে শিশুদের জলকেলি। গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর থেকে ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা অবধি সীমিত আয়োজনে মৈত্রীময় জলকেলিতে মেতে উঠে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা। সোমবার করোনা থেকে মুক্তি লাভের আশায় শেষ হলো বর্ণিল এই উৎসব।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্য থিং অং ও সাবেক সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন জানান, 'এটি রাখাইন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির অংশ। করোনা মহামারীর কারণে এবার সীমিত আকারে জলকেলিতে মজেছে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা। তবে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন চলমান থাকায় উৎসবে আগের মতো উচ্ছ্বাস ছিল না। ঘরে ঘরে সীমিত পরিসরে সবাই নতুন বছরকে বরণ করতে নানা কর্মসূচী পালন করেছে'।