স্কুলছাত্রী গুলিবিদ্ধ: মেয়ের প্রেমিক ও তার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন ঠিকাদার
খুলনায় ঠিকাদারের লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে বিদ্ধ স্কুলছাত্রী লামিয়ার (১৩) পায়ে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়েছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে প্রায় দুই ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে তার পা থেকে গুলিটি বের করা হয়।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি রেজা সেকেন্দার জানান, খুমেকের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ ও ডা. অনুপ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধানে লামিয়ার পায়ে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। সে এখন আশঙ্কামুক্ত।
এদিকে, ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর গুলি ছোড়ার ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। মূলত মেয়ের প্রেমিক ও প্রেমিকের তিন বন্ধু বাসায় গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন ওই ঠিকাদার। সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রী লামিয়ার বাম পায়ে বিদ্ধ হয়।
ঠিকাদার ইউসুফের করা মামলায় ওই চার তরুণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। গ্রেপ্তার চার তরুণ হলেন, যশোরের কেশবপুর উপজেলার মো. মোস্তফা বিশ্বাসের ছেলে মোহাম্মদ আবু সাঈদ ওরফে শাহেদ (২২), বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিক আব্দুল হাইয়ের ছেলে মো. ইসমাইল মল্লিক (২৭), খুলনার কয়রা উপজেলার শেখ হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. মেহেদী হাসান (২১) ও নগরীর দৌলতপুর থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মিজানুর রহমান শেখের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (২৩)।
তবে ওই তরুণদের চাঁদাবাজ ও দুস্কৃতিকারি হিসেবে উল্লেখ করে মামলাটি করেছিলেন ঠিকাদার ইউসুফ আলী। তার মামলায় অভিযোগ করা হয়, মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদের পাশের বাবু খান রোডের সংস্কারের কাজ পেয়েছেন তিনি। কিছু দুষ্কৃতিকারি এ কাজের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিল। গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা চাঁদা চাইতে বাড়িতে গেলে লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে তিনি গুলি ছোড়েন।
এজাহারে ইউসুফ আলী আরও উল্লেখ করেন, তার বাড়িতে গিয়ে এক পর্যায়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি পিস্তল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ সময় পিস্তলে তিন রাউন্ড গুলি ছিল। তিনি দুই রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ওই চার তরুণও দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করেছিল। তাদের ছোড়া গুলিই লামিয়ার পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই দিন ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীই গুলি ছেড়েন। বাড়িতে যাওয়া ওই যুবকদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। তারা কোনো চাঁদাবাজ বা দুস্কৃতিকারি নয়। এরমধ্যে একজন ঠিকাদারের মেয়ের প্রেমিক এবং বাকি তিনজন ওই প্রেমিকের বন্ধু। তাদের পরিচয় পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দেন ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলী। পরিস্থিতি খারাপ হবে বুঝে বাড়ির লোকেরা তাদের বের হয়ে যেতে বলেন। তারা বের হতে না হতেই পিস্তল হাতে বেরিয়ে পড়েন ইউসুফ।
তখনই তিনি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। আর শব্দ শুনে প্রতিবেশী স্কুল পড়ুয়া লামিয়া কৌতুহলবশত ঠিকাদারের বাড়ির সামনে যায়। ঠিক সেই সময় একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিদ্ধ হয় লামিয়ার পায়ে।
ঠিকাদারের করা মামলা ও তার দাবি করা সব তথ্য মিথ্যা বলে অভিযোগ করে ওই চার তরুণের স্বজনরা বলেন, ইউসুফ আলীর মেয়ে স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্রী। ঠিকাদার তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মেয়ের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। ঠিকাদারের মেয়ের সঙ্গে শাহেদ নামে ছেলেটির দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
কয়েকদিন মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে প্রেমিক শাহেদ তার তিন বন্ধু মেহেদী, ইসমাইল ও সাইফুলকে নিয়ে যান ইউসুফ আলীর বাড়িতে। তারা ঠিকাদারের মেয়ে ও শাহেদের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের কথা বলতেই ইউসুফ আলী ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তাদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন সেখানে উপস্থিত ঠিকাদারের শ্যালক তাদের বের হয়ে যেতে বলেন।
তারা বের হয়ে দরজা পর্যন্ত আসার পরে ইউসুফ পিস্তল নিয়ে গুলি ছোড়েন। পরবর্তীকালে নিজেকে রক্ষা করতে, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে তিনি মেয়ের প্রেমিক ও প্রেমিকের বন্ধুদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছেন বলেও অভিযোগ স্বজনদের।
গ্রেপ্তার সাইফুল ইসলামের মামা মো. সোহেল বলেন, 'আমার ভাগ্নে ও তার বন্ধুদের ওপর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গুলি ছুড়েছেন ঠিকাদার ইউসুফ। আবার তাদের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির মামলাও করেছেন। আমরা বিষয়টি আইনিভাবেই মোকাবিলা করব।'
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) কানাই লাল সরকার জানান, ঠিকাদার ইউসুফ আলীর করা মামলায় ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে আসল রহস্য উদঘাটনে ঘটনাটির আরও তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় লক্ষভ্রষ্ট গুলিতে আহত হন ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া। এ ঘটনায় স্থানীয় ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর একটি লাইসেন্সকৃত পিস্তল, অব্যবহৃত ১০ রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড গুলির খোসা জব্দ করে পুলিশ।