স্পেনের টিপসার সঙ্গে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের চুক্তি করছে সেতু কর্তৃপক্ষ
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) আগামী ৩০ বছরে কি কি কাজ করবে তার মাহপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে স্পেনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান- টিপসা। টিপসা ২৪৩ কোটি টাকায় টেন্ডার জেতার পর জাতীয় ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি এপ্রিলে তা অনুমোদন করে।
চলতি মে মাসেই টিপসার সাথে চুক্তি সাক্ষর করতে চায় সেতু কর্তৃপক্ষ। এমনটি ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সেতু বিভাগ।
মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের পাশাপাশি মেঘনা নদীর উপর দুটি ব্রীজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করবে তারা। এর একটি শরিয়তপুর-চাঁদপুর ও অন্যটি গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ। এছাড়া ভোলা-লক্ষীপুর সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডিও করবে। ইনার সার্কুলার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের গবেষণাও হবে এ প্রকল্পের অধীনে।
"শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়ক ও গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ সড়কে মেঘনা নদীর উপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের জন্য মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুতকরণ" শীর্ষক প্রকল্পটি চুক্তি স্বাক্ষরের দিন হতে ২৪ মাসে কাজ শেষ হবে।
সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "খুব দ্রুতই চুক্তি সাক্ষর হবে। আশা করছি এ মাসেই করা যাবে।"
"উন্নয়ন রুপকল্প ২০৪১'কে সামনে রেখে পরিবহন খাতে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ড কী হবে, তার মাস্টার প্ল্যান করাই প্রধান উদ্যেশ্য। পাশাপাশি কয়েকটি প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হবে," বলেন তিনি।
১৫০০ মিটারের চেয়েও বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু, টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে, ও এলিভেটেডওয়ে নির্মানের ম্যান্ডেট রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের। মাস্টার প্ল্যানে এসব পরিকল্পনা খতিয়ে দেখা হবে।
সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে স্পেন ভিত্তিক কোম্পানিটি ঢাকা সাবওয়ের ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে যার অধিকাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করতে গিয়ে কোম্পানিটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের, বিশেষ করে ঢাকার পরিবহন খাত সম্পর্কে একটি ধারনা পেয়েছে। এসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য রয়েছে তাদের হাতে। সাবওয়ের অভিজ্ঞতা আর সেতু বিভাগের সাথে তাদের ভালো একটা বোঝাপড়ার কারনে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে উভয়পক্ষই। চুক্তির সবকিছু আগেই ঠিক করা হয়েছে বলে, এখন শুধু স্বাক্ষর করে কাজ শুরুর অপেক্ষা।
চুক্তির খসড়া অনুযায়ী মাস্টার প্ল্যানে আগামী ১০ বছরে যেসব প্রকল্প নির্মাণ করা হবে, তার প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডিও করে দেবে টিপসা। সার্বিকভাবে মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আর্থিক দিকটিও আলোচিত হবে।
এছাড়াও, পরামর্শক সংস্থাটি প্রকল্প সংক্রান্ত বিদ্যমান সকল প্রকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করবে। সরকারের অন্যান্য বিভাগের করা মাস্টারপ্ল্যানও আমলে নেবে টিপসা। বিশেষ করে, সড়ক নিরাপত্তা পরিসংখ্যান, ট্রাফিকের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ে নজর দেবে তারা। পাশাপাশি পরিবহন অবকাঠামো, এসংক্রান্ত গবেষণা এবং পরিকল্পনাগুলোকে আলাদা আলাদা ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য যাচাই করবে।
সেতু বিভাগের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল হোসেন বলেন, "সম্পূর্ণ প্রকল্পের খরচ সেতু কর্তৃপক্ষ নিজেদের অর্থে মেটাবে।"
"মহাপরিকল্পনার অধীনে দেশের প্রতিটি জেলার, প্রতিটি প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার একটি রোডম্যাপ ও একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রণীত হবে, যা সমগ্র দেশের অর্থনীতিকে সুষমভাবে বিকশিত করবে," তিনি যোগ করেন।
মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর পর নদীটিতে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ বিষয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল সেতু বিভাগ। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়, আগে শরীয়তপুর- চাঁদপুর রুটে মেঘনা সেতু নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। তাই এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিকে গুরুত্ব দিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে একই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের সাথে সাথে মেঘনা সেতু কোন স্থানে হবে, আর এতে খরচই বা কতো হবে, আর সেতুটি নির্মাণে কতো সময় লাগবে- তাও জানা যাবে ২০২২ প্রকল্পটি শেষে। একইসঙ্গে, সেতুটি নদীর উপর দিয়ে হবে নাকি নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মিত হবে, সে সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে টিপসা।