‘নতুন জীবন’ নিয়ে সাজেক ফিরছে ৫ শিশু
হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৭ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসছে রাঙামাটির সাজেকের ৫ শিশু।
শনিবার তাদের হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র দেয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নতুন জীবন ফেরা এই ৫ শিশু হলেন, প্রতিল ত্রিপুরা (৫), রোকেন্দ্র ত্রিপুরা (৬), রাজেন্দ্র ত্রিপুরা (৮), নহেন্দ্র ত্রিপুরা (৯), দীপায়ন ত্রিপুরা (১১)। তারা সবাই সহোদর।
হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে বসে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পর গত ২৫ মার্চ খবর পেয়ে জরুরী ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টার উড়ে যায় সাজেকের দুর্গম শিয়ালদহের লুংথিয়ান পাড়ায়। হেলিকপ্টারে করে এই শিশুদের চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নামিয়ে সেখানে থেকে সেনাবাহিনীর এ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তাদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ বহন করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী। চিকিৎসার সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নেন সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এসএম মতিউর রহমান।
তিনি বলেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের চিকিৎসক নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সঠিক চিকিৎসা প্রদানের ফলে শিশুরা নতুন জীবন পেয়েছে। তাদের হাসপাতালে আনতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিল।
শনিবার সকালে তাদের গ্রহণ করে প্রত্যককে নতুন পোশাক, ফলমূল উপহার দেয় সেনাবাহিনী ও মেডিকেলের স্টাফরা। পরে শিশুদের বাবা অনি ভুষণ ত্রিপুরার হাতে শিশুদের তুলে দিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে সাজেক পাঠানোর ব্যবস্থা করে সেনাবাহিনী।
শিশুদের বাবা অনি ভুষণ ত্রিপুরা বলেন, সেনাবাহিনী ও সরকারের সহযোগিতা না হলে আমার সন্তানরা মারা যেতে। এলাকায় কয়েকজন শিশু মারা গেছে। সেনাবাহিনী না হলে আমার সন্তানদেরও এ অবস্থা হত। এজন্য আমি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
সাজেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, শিশুদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি চট্টগ্রাম থেকে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। আমরা তাদের গ্রহণ করতে রাস্তায় অপেক্ষায় আছি।
নেলসন আরও জানান, তারা আজ লুংথিয়ান পাড়ায় যেতে পারবে না। করোনা আতংকে এলাকায় লকডাউন চলার কারণে তারা গ্রামে প্রবেশ করতে পারবে না। সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ মাচালং সাত নম্বর পাড়ায় একটি বাড়িতে তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছে। তাদের খাবার সরবরাহ করবে ইউনিয়ন পরিষদ। ১৪ দিন পর তারা লুংথিয়ান পাড়ায় যেতে পারবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে সাজেকের শিয়ালদহ, তুইচুই, বেতলিং মৌজায় হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ হামে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৯ জন শিশু মারা যায়। এ হাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমানে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির মেডিকেল টিম কাজ করছে। এদের সহায়তা করছে জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ।