‘রাস্তার ফিটনেস ঠিক করে আইন পাস করতে আসেন’
“আপনারা গাড়ির ফিটনেস নাই তার কথা বলছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই তার কথা বলছেন, কিন্তু রাস্তার যে ফিটনেস নাই সেকথা বলছেন না কেন? আগে রাস্তার ফিটনেস ঠিক করেন তারপর আইন পাস করতে আসেন।”
কথাগুলো বলছিলেন বাস চালক প্রিয়তোষ সরকার। তিনি রাজশাহী-পাবনা রুটে ‘রাব্বী পরিবহন’ নামের একটি বাসের চালক।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী নগরীর ভদ্রা মোড়ে কথা হয় প্রিয়তোষের সাথে। সড়কের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, “রাস্তায় এখানে গর্ত, তো ওখানে এবড়ো থেবড়ো, রাস্তা ভাঙা, রাস্তার মাঝে মাঝে পিচ-ঢালাই উঠে গেছে, সরু রাস্তা। সেই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটবে না তো কি হবে? আগে রাস্তার ফিটনেস ঠিক করেন তারপর আইন কার্যকর করতে আসেন। আমরা সব মেনে নেব। রাস্তার ফিটনেস নাই সেটা তো বলছেন না।”
প্রিয়তোষ সরকার মাসের মধ্যে ১৫ দিন গাড়ি চালান। বাকী ১৫ দিন বন্ধ গাড়ী চালনা বন্ধ থাকে। একদিনে রাজশাহী থেকে পাবনা এবং পাবনা থেকে রাজশাহী আপ-ডাউন ট্রিপ দেওয়ার পর তাঁর হাজিরা পড়ে ৮০০ টাকা। ওই টাকা দিয়েই চলে প্রিয়তোষের পাঁচ সদস্যের সংসার।
প্রিয়তোষ সরকার বলেন, “সড়কে এতো গাড়ির চাপ। এত চালক। যে সড়কে ১০০ গাড়ি চালানোর কথা সেই সড়কে চলছে ১০০০ গাড়ি। তারপর আবার মহাসড়ক এতই সংকীর্ণ যে ডাবল ক্রস করতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে। ভদ্রা মোড় থেকে নওদাপাড়া কিংবা নাটোর থেকে পাবনা সড়ক এতই ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা যে, দুর্ঘটনা না ঘটে উপায় নেই।”
তার সহকারী গোপালচন্দ্রও কথা বলেন প্রিয়তোষের সুরে।
তিনি বলেন, “সরকার রাস্তা ঠিক করছে না, অথচ আইন পাশ করছে।”
বিশেষজ্ঞরাও নানা সময়ে বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ সড়কে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি গাড়ি ও সরু রাস্তা। যেখানে চার লেন সড়ক হওয়ার কথা সেখানে সংকীর্ণ সড়কে কয়েক হাজার যানবাহন চলছে। বেশিরভাগ সড়কই এবড়ো থেবড়ো আর ভাঙাচোরা। রাস্তা মেরামত করার একবছরের মধ্যেই কোথাও কোথাও আবার রাস্তার পিচ উঠে যাচ্ছে।
গত চারদিনে এই প্রতিবেদকের সাথে শ’খানেক বাসচালকের কথা হয়েছে। সম্প্রতি কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে তাঁদের সবার কন্ঠেই ঝরেছে ক্ষোভ।
মোখলেসুর রহমান নামের একজন বাসচালক জানান দুর্ঘটনার পেছনে ভিন্ন এক প্রেক্ষিতের কথা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, “শুধু যে বাসচালকের কারণে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে তা না, বরং বাসের সুপারভাইজারদের কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের মধ্যে তারা এত তাড়াহুড়ো করে যে তাদের কথা মতো বাসচালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। অথচ আইনে সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে কোনো কথা লেখা নেই। সব দোষ বাসচালকের।”
আরেক বাস চালক সোহরাব হোসেন বলেন, “মালিকরা গাড়ির ফিটনেস না করেই বিআরটিএকে টাকা দিয়ে, পুরাতন গাড়িতে রং করে সড়কে বের করে, চালকরা বাধ্য হয়েই সেই গাড়ি চালান। তখন ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। খুব কম ঘটনা আছে যেখানে চালকরা ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।”
এদিকে বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে স্বাভাবিকভাবেই চলছে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন। সকালে রাজশাহী-ঢাকা, রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জে ও রাজশাহী-নওগাঁ রুটে বাস ও ট্রাক ছেড়ে গেছে।
তবে উত্তরের রংপুর, গাইবান্ধা, দক্ষিনাঞ্চলের কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন রুটের পরিবহন রাজশাহীতে আসছে না। একারণে ওইসব রুটে রাজশাহী থেকেও কোন পরিবহন যাচ্ছে না। ফলে সড়কে বাসের সংখ্যা কম। এতে করে বাসগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। বাস কম থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তিও বেড়েছে।