বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক লাখ শিক্ষার্থী
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গত মাসের বন্যায় শিক্ষাখাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে কয়েক লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারেনি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
জুন মাসে ভারি মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট এই বন্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এর বাইরে আরও ডজনখানেক মানুষের মৃত্যুসংবাদ মিলে। টানা কয়েকদিনের তীব্র বৃষ্টিপাতে এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বাংলাদেশ।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হওয়া সিলেট অঞ্চলে কয়েক হাজার স্কুল ও কলেজ বন্যার কারণে সপ্তাহখানেক বন্ধ রাখতে হয়। ফলে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষের বাইরে রয়ে যায়।
সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক ড. নাসিমা বেগম আরব নিউজকে বলেন, বন্যার কারণে সিলেটের তিন হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা সিলেটের মোট প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকেরও বেশি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৮ লাখ শিশু পড়াশোনা করছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, "অর্ধেকের বেশি স্কুল বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধারণা করা হচ্ছে এসব অঞ্চলের শিশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে"।
তিনি আরও বলেন, "আমরা এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুরোপুরি নির্ণয় করতে পারিনি কেননা সব জায়গায় বন্যার পানি এখনও নামেনি। ক্লাস শুরু হলে শিক্ষার্থীদের নতুন বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।"
সিলেটের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল হাকিম আরব নিউজকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো জরুরিভাবে মেরামত করা প্রয়োজন।
"ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিচতলা বন্যার কারণে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মেরামতের কাজ না হলে শিক্ষার্থীরা সেখানে ক্লাস করতে পারবে না," বলেন তিনি।
বন্যায় শুধু প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জুনে প্রায় দেড় লাখ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
সিলেটের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল মান্নান খান আরব নিউজকে বলেন, "বন্যায় ৬০০-র বেশি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে"।
১৯ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার পানিতে অনেক শিক্ষার্থীর বইখাতা নষ্ট হয়েছে।
নজিরবিহীন এই বন্যা যখন আঘাত হানে তখন বেশিরভাগ মানুষই কোনোমতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সরে আসার সময় পেয়েছিল।
১৬ বছর বয়সী আবদুর রহমান আরব নিউজকে বলেন, "বন্যায় জীবন বাঁচানোই ছিল আমাদের মূল চিন্তা"।
"সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যে আমি আমার কোনো বই বাঁচাতে পারিনি"।
গতমাসে যে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক স্তরের সর্বশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল, সোহাগ তাদেরই একজন। এখন পর্যন্ত পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
সোহাগের মতো ১৬ বছর বয়সী সানজিদা জাহান চৌধুরী তার পাঠ্যবই বন্যায় হারিয়ে ফেলে। সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে তার পুরো বাড়ি ডুবে যায়।
"মধ্যরাতে মাত্র আধঘণ্টার ভেতর আমাদের বাড়ির ভেতর প্রায় দেড় মিটার উচ্চতার বন্যার পানি ওঠে," জানায় সানজিদা। সানজিদা ও তার পরিবার আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর তাদের উদ্ধার করা হয়।
"আমার বইখাতা, নোটের অধিকাংশই ভেসে গেছে। বই ছাড়া আমি পরীক্ষায় কীভাবে বসব" প্রশ্ন সানজিদার।
- সূত্র: আরব নিউজ