৩ মেগাওয়াটের হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে মনপুরা দ্বীপে
স্থলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন ভোলার মনপুরা দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবাহের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ৩ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার-ব্যাটারী-ডিজেল সম্বলিত হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ও ওয়েস্টার্ন মনপুরা সোলার পাওয়ার লিমিটেড (ডব্লিউএমএসপিএল)- যৌথভাবে এই কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করবে।
সোমবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিটিতে ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ)- এ বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে যুগ্মসচিব নিরোদ চন্দ্র মন্ডল ও পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট-এ ওজোপাডিকোর সচিব মো: আলমগীর কবির এবং ডব্লিউএমএসপিএল-এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশির আহমেদ স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, ওজোপাডিকো এই কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ২১.৮৬ টাকা ধরে কিনে গ্রাহকের কাছে সরকার নির্ধারিত রেটে বিক্রি করবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নির্ধারিত ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ৭.১৩ টাকা।
২০ বৎসর মেয়াদী এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০,০০০ কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। মনপুরা দ্বীপের ২০,৪৮৩ জন গ্রাহক সরকারি মূল্যে তথা বিসিআরসি- এর রেটে বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন। ফলে উক্ত দ্বীপে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পায়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটবে।
মনপুরা দ্বীপটি ভোলা জেলার অন্তর্গত একটি দুর্গম এলাকা, যা মূল ভূখন্ড হতে আনুমানিক ১৮ কিলোমিটার এবং বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে প্রায় ৯৬ কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত।
বর্তমানে মনপুরা দ্বীপে মোট ৬৭৫ কেডব্লিউপি ক্ষমতাসম্পন্ন ৩টি মিনিগ্রিডের মাধ্যমে ২৩০৩ জন গ্রাহককে, ১.৬৬ এমভিএ ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে ৮৫৩ জন গ্রাহককে এবং সোলার হোস সিস্টেমের মাধ্যমে অবশিষ্ট গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তবে এসব অবকাঠামো দিয়ে সকল গ্রাহককে ২৪ ঘণ্টা সরকারি মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
নতুন এই কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন হলে দ্বীপের সকল গ্রাহককে সরকারি মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক মো. মতিউর রহমান।
প্রকল্পটির আওতায় ১০ মেগাওয়াটের সোলার প্যানেল, ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার লিথিয়াম আয়রন ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম স্থাপিত হবে।
এছাড়া দ্বীপটিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখার স্বার্থে ব্যাকআপ হিসেবে ২টি ১.২৫ এমভিএ ডিজেল জেনারেটর থাকবে, যা দুর্যোগকালীন বা কম ইরিডিয়েন্স সম্পন্ন দিনগুলোতে ব্যবহৃত হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ সচিব মো: হাবিবুর রহমান বলেন, আগামী দিনের জ্বালানি হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি। গ্রিন এনার্জিতে উত্তরণের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বর্তমান জ্বালানি সংকট নিয়ে বিদ্যুৎ সচিব আরো বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আরো বিদ্যুৎ পেলে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সহজ হতো।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে পিডিবির চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুবুর রহমান, ওজোপাডিকোর চেয়ারম্যান সেলিম আবেদ, স্রেডার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আজহারুল ইসলাম, প্রকল্পের কারিগরি ডিজাইনার শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী ও প্রকল্প পরিচালক মো: মতিউর রহমান বক্তব্য রাখেন।