শহরের বাসগুলো রাতে কোথায় ঘুমায়?
ঢাকার সব বাস রাতে কোথায় যায় কখনো কি ভেবে দেখেছেন? উত্তর হলো- কোথাও না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েক শতাব্দী পুরোনো ঢাকার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ঢাকা।
শহর যেমন সম্প্রসারিত হয়েছে, তেমনি এর জনসংখ্যা এবং গণপরিবহনও বেড়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, নগরের পরিবহন ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি।
দিনের বেলায় যানজটের কারণে একরকম স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা। অন্যদিকে রাত নামলেই শহরের রাস্তাগুলো পরিণত হয় বাস পার্কিং জোনে।
পরিবহন সংস্থাগুলোর এ ধরনের পার্কিং শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও ব্যাহত করে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের মত।
এদিকে নির্ধারিত পার্কিং জায়গা, বাস ডিপো ও গ্যারেজ না থাকায় সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ)-র মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এখনও এই সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি।
বিকাশ পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ জানান, 'পার্কিংয়ের জন্য কোনো ডিপো বা নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় আমরা বাসগুলো রাস্তায় রাখি। সাধারণত রাতের বেলা (রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত) গাড়ি পার্ক করি যখন রাস্তায় যানজট কম থাকে। অন্যদিকে সারাদিন বাসগুলো রাস্তায় চলাচল করে'।
বিআরটিএকে দায়ী করে ডিটিসিএ-র ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, 'বিআরটিএ-র শর্তাবলী অনুযায়ী, পরিবহন মালিকদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু পার্কিং স্পেস স্বল্পতার কারণে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু করার নেই'।
বিআরটিএ-র মুখপাত্র ও পরিচালক মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, 'বিআরটিএ নয়, ডিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কমিটি রুট পারমিট দিয়েছে। বাস মালিকরা পারমিট পাওয়ার জন্য কোনো একটি গ্যারেজ ভাড়া করে কাগজপত্র জমা দিলেও পরে তারা রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে রাখে'।
বিকাশ পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, 'বেশিরভাগ মালিকের ব্যক্তিগত জমি নেই বা বাস পার্কিংয়ের জন্য জমি লিজ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত আয় নেই। অধিকাংশ মালিক লোকসান গুনছেন বলে ঢাকার পরিবহন ব্যবসা এখন খারাপ অবস্থায় রয়েছে'।
ডিটিসিএ-র ধ্রুব আলম বলেন, 'মালিকরাও তাদের রুট শুরুর পয়েন্টের কাছাকাছি বাস রাখতে চায়। আমরা এটাকে বলি 'ডেড মাইলেজ'।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানাবোঝার অভাব রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, 'সিটি করপোরেশন এখানে ব্যর্থ। তাদের উচিত ছিল আরও অনেক আগেই এই সমস্যার সমাধান করা। ডিটিসিএ'রও দায় রয়েছে কেননা কর্মকর্তারা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি'।
পার্কিং জোনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে ঢাকা দক্ষিণের সুপারিনটেন্ডেন্ট প্রকৌশলী কাজী বোরহান উদ্দিন বলেন, 'আমরা এখন সায়েদাবাদে একটি বড় পার্কিং জোন তৈরি করছি। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে'।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কেন এর আগে বিষয়টি সমাধান করতে ব্যর্থ হয় জানতে চাইলে কাজী বোরহান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডিএনসিসি-ও পার্কিং জোন তৈরির প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা করেছে'।
ডিএমপির উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, 'নগরীর অধিকাংশ সড়কে প্রতি রাতে হাজার হাজার বাস পার্কিং করা হয়। এধরনের পার্কিং বন্ধ করা কঠিন। এছাড়া শহরে পার্কিং জোন নেই। বাসগুলো কোথায় যাবে?'
'নগর পরিকল্পনাবিদ বা সিটি করপোরেশন পার্কিং ব্যবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করেনি, যেগুলো আমরা উন্নত দেশে দেখতে পাই', বলেন তিনি।
'এই ইস্যুটির জন্য আমাদের দায়ী করা হয় কিন্তু আমরা কেবল একটি আইন বাস্তবায়নকারী একটি সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অনুমতি না দিলে আমরা কিছুই করতে পারব না। আমরা প্রায়ই যৌথ সভায় বিষয়টি নিয়ে আসি কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়। অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে,' বলেন ফারুক হোসেন।
ঢাকার যানজট সমাধানে একটি মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 'যানবাহন রাখার জন্য শহরের চারপাশে বেশ ভাল সংখ্যক পার্কিং জোন তৈরি করা প্রয়োজন, পুলিশ একা এই সমস্যা সমাধান করতে পারে না,' বলেন তিনি।
তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, 'নির্ধারিত পার্কিং জায়গা নির্মাণের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে শতবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু সরকার বা সিটি করপোরেশন কেউই আমাদের কথা শুনেনি'।
রাজধানীতে কোনো বেসরকারি পার্কিং জোন না থাকায় মালিকরা রাস্তায় বাস পার্কিং করতে বাধ্য হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে পুলিশও প্রায়ই মামলা করে।
ঢাকার সব বাস রাতে কোথায় যায় কখনো কি ভেবে দেখেছেন? উত্তর হলো- কোথাও না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েক শতাব্দী পুরোনো ঢাকার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ঢাকা।
শহর যেমন সম্প্রসারিত হয়েছে, তেমনি এর জনসংখ্যা এবং গণপরিবহনও বেড়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, নগরের পরিবহন ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি।
দিনের বেলায় যানজটের কারণে একরকম স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা। অন্যদিকে রাত নামলেই শহরের রাস্তাগুলো পরিণত হয় বাস পার্কিং জোনে।
পরিবহন সংস্থাগুলোর এ ধরনের পার্কিং শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে আরও ব্যাহত করে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে বলে বিশ্লেশকদের মন্তব্য।
এদিকে নির্ধারিত পার্কিং জায়গা, বাস ডিপো ও গ্যারেজ না থাকায় সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ)-র মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এখনও এই সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি।
বিকাশ পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ জানান, 'পার্কিংয়ের জন্য কোনো ডিপো বা নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় আমরা বাসগুলো রাস্তায় রাখি। সাধারণত রাতের বেলা (রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত) গাড়ি পার্ক করি যখন রাস্তায় যানজট কম থাকে। অন্যদিকে সারাদিন বাসগুলো রাস্তায় চলাচল করে'।
বিআরটিএকে দায়ী করে ডিটিসিএ-র ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, 'বিআরটিএ-র শর্তাবলী অনুযায়ী, পরিবহন মালিকদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু পার্কিং স্পেস স্বল্পতার কারণে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু করার নেই'।
বিআরটিএ-র মুখপাত্র ও পরিচালক মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, 'বিআরটিএ নয়, ডিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কমিটি রুট পারমিট দিয়েছে। বাস মালিকরা পারমিট পাওয়ার জন্য কোনো একটি গ্যারেজ ভাড়া করে কাগজপত্র জমা দিলেও পরে তারা রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে রাখে'।
বিকাশ পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, 'বেশিরভাগ মালিকের ব্যক্তিগত জমি নেই বা বাস পার্কিংয়ের জন্য জমি লিজ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত আয় নেই। অধিকাংশ মালিক লোকসান গুনছেন বলে ঢাকার পরিবহন ব্যবসা এখন খারাপ অবস্থায় রয়েছে'।
ডিটিসিএ-র ধ্রুব আলম বলেন, 'মালিকরাও তাদের রুট শুরুর পয়েন্টের কাছাকাছি বাস রাখতে চায়। আমরা এটাকে বলি 'ডেড মাইলেজ'।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানাবোঝার অভাব রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, 'সিটি করপোরেশন এখানে ব্যর্থ। তাদের উচিত ছিল আরও অনেক আগেই এই সমস্যার সমাধান করা। ডিটিসিএ'রও দায় রয়েছে কেননা কর্মকর্তারা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি'।
পার্কিং জোনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে ঢাকা দক্ষিণের সুপারিনটেন্ডেন্ট প্রকৌশলী কাজী বোরহান উদ্দিন বলেন, 'আমরা এখন সায়েদাবাদে একটি বড় পার্কিং জোন তৈরি করছি। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে'।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কেন এর আগে বিষয়টি সমাধান করতে ব্যর্থ হয় জানতে চাইলে কাজী বোরহান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডিএনসিসি-ও পার্কিং জোন তৈরির প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা করেছে'।
ডিএমপির উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, 'নগরীর অধিকাংশ সড়কে প্রতি রাতে হাজার হাজার বাস পার্কিং করা হয়। এধরনের পার্কিং বন্ধ করা কঠিন। এছাড়া শহরে পার্কিং জোন নেই। বাসগুলো কোথায় যাবে?'
'নগর পরিকল্পনাবিদ বা সিটি করপোরেশন পার্কিং ব্যবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করেনি, যেগুলো আমরা উন্নত দেশে দেখতে পাই', বলেন তিনি।
'এই ইস্যুটির জন্য আমাদের দায়ী করা হয় কিন্তু আমরা কেবল একটি আইন বাস্তবায়নকারী একটি সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অনুমতি না দিলে আমরা কিছুই করতে পারব না। আমরা প্রায়ই যৌথ সভায় বিষয়টি নিয়ে আসি কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়। অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে,' বলেন ফারুক হোসেন।
ঢাকার যানজট সমাধানে একটি মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 'যানবাহন রাখার জন্য শহরের চারপাশে বেশ ভাল সংখ্যক পার্কিং জোন তৈরি করা প্রয়োজন, পুলিশ একা এই সমস্যা সমাধান করতে পারে না,' বলেন তিনি।
তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, 'নির্ধারিত পার্কিং জায়গা নির্মাণের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে শতবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু সরকার বা সিটি করপোরেশন কেউই আমাদের কথা শুনেনি'।
রাজধানীতে কোনো বেসরকারি পার্কিং জোন না থাকায় মালিকরা রাস্তায় বাস পার্কিং করতে বাধ্য হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে পুলিশও প্রায়ই মামলা করে।