১৪০ টাকা মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা চা শ্রমিকদের
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য চলমান শ্রমিক ধর্মঘট ষষ্ঠ দিনেও সমাধান আসেনি। দৈনিক ১৪০ টাকা মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আজও সকাল থেকেই দেশের প্রতিটি চা বাগানে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করেন শ্রমিকরা।
দুপুরে শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ এসে তাদের সেখান থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে শ্রমিকরা বাগানে ফিরে যান।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চা শ্রমিকরা।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের সবগুলো বাগানে দশম দিনের মতো চলছে আন্দোলন, আর ধর্মঘটের পেরিয়ে গেছে ছয় দিন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে চায়ের এই ভরা মৌসুমে চা বাগানগুলোতে বিরাজ করছে শূন্যতা। কারখানাগুলো বন্ধ, সবুজ কচি পাতাগুলোও রয়ে গেছে গাছেই। শ্রমিকরা দল বেঁধে একজায়গায় বসে স্লোগান দিচ্ছেন, মালিকদের কাছে দাবি জানাচ্ছেন তাদের মজুরি বৃদ্ধির।
এদিকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে চলমান ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমকে জানান, 'আমরা আজ চা বাগানের সাতটি ভ্যালির সভাপতি, সম্পাদক ও বাগান পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলাম। গতকাল ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে আমরা তাদের জানিয়েছি। চা শ্রমিকরা বলেছেন প্রয়োজনে আমরা এক মাস না খেয়ে থাকব, তবুও আমরা তিনশ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি থেকে সরে আসব না।'
এদিকে গতকালকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যাপারে জানাতে চা শ্রমিক ইউনিয়ন সাত ভ্যালির সঙ্গে আজ দুপুরে মৌলভীবাজারের চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসে। সেখানে গতকাল ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদল গতকালের বৈঠকের ব্যাপারে বাগান পঞ্চায়েত কমিটিগুলোকে অবহিত করে।
বৈঠকে বালিশিরা ভ্যালির ৬৪টি চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিভিন্ন বাগানের পঞ্চায়েত প্রধানরা বক্তব্য দেন।
পারকুল চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি রিপন দেব বৈঠকে বলেন, 'সাধারণ চা শ্রমিকরা আমাদের দিকে চেয়ে বসে আছে। আমরা ২০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি মেনে নিয়ে চা শ্রমিকদের সাথে বেইমানি করতে পারব না।'
এদিকে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার, চা বাগান মালিকপক্ষ ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি গতকাল রাতে কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে।
গতকাল বিকেলে ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর মধ্যস্থতায় এই বৈঠক শুরু হয়। ছয় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বৈঠকে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি কোনো পক্ষই।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ জানান, 'শ্রম অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের মধ্যস্থতায় আমরা বসেছিলাম। কিন্তু আমরা যেটা প্রত্যাশা করেছিলাম সেটি হয়নি। তবে আলোচনার দুয়ার খোলা থাকবে আমাদের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি আমাদের আন্দোলন কর্মসূচিও চলমান থাকবে।'
তিনি বলেন, 'মালিকপক্ষ বৈঠকে যে মজুরি প্রস্তাব করেছে সেটি তিনশ টাকার ধারেকাছেও না, তাই আমাদের কাছে এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।'
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা জানান, 'গতকাল সারাদিনব্যাপী আমরা বৈঠক করেছি। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা প্রস্তাব করেছিল। আমরা এই মুহূর্তে এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করছি।'
বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, 'শ্রমিকপক্ষ ২ দিনের সময় নিয়েছে, তারপর তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।'
তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, 'আমরা কোনো সময় নিইনি কারো থেকে। আমাদেরকে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছিল এবং ১৪০ টাকা মজুরি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমরা বলেছি সরকারের ডাকে আমরা এখানে এসেছি, আমরা আলোচনা করতে পারি, কিন্তু আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।'
শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী বলেন, 'মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের সাথে আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওনারা (শ্রমিকপক্ষ) একদিন সময় চেয়েছেন, আজ ওনারা স্থানীয় নেতাদের সাথে বসে একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন।'