জ্বালানি সংকট সমাধানে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নজর দিতে হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালানি খাতকে দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। সেইসঙ্গে, জ্বালানি সংকট নিরসনে আগামী দিনে সরকারকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ওপর মনোযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (২২ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএনপির আয়োজনে 'দুর্নীতি জ্বালানি সংকটের উৎস'- শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
সম্প্রতি রাজধানীতে বিআরটি'র গার্ডার চাপায় ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সরকারের অবহেলার সমালোচনাও করেন মির্জা ফখরুল। এর পাশাপাশি সিলেটের চা-শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার দাবি করছে এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার, আর চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা মাত্র!
"তাহলে চা শ্রমিকরা কি এদেশের লোক না? তাদের আয় কোথায়?" প্রশ্ন রাখেন বিএনপির মহাসচিব।
একধাপে জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের অন্য বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল বলে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, গভীর রাতে জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অর্থনীতিকে সংকটে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার জনকল্যাণের চেয়ে দলীয় ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।
"এই সরকার দেশীয় জ্বালানি শক্তির ওপর দৃষ্টি না দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করছে কেবল লুটপাটের উদ্দেশ্যেই। এই দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা সরকারের অধীনে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সম্ভব নয়, কারণ তাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই", যোগ করেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, জ্বালানি আমদানিতে বর্তমানে শুল্ক, কর বাবদ যে ৩৪ শতাংশ ব্যয় করতে হয়, তা অবিলম্বে মওকুফ করতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য ৫ আগস্টের পূর্বাবস্থায় পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। বিশ্ববাজার থেকে কম দামে তেল কিনে জনগণের কাছে উচ্চমূল্যে তা বিক্রির মাধ্যমে এতদিন বিপিসি যে মুনাফা করেছে তার সঙ্গে গত কয়েক মাসের লোকসান সমন্বয় করতে হবে। এবং জনগণের ওপর জ্বালানির মূল্য না চাপিয়ে জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে।
মোশাররফ আরও বলেন, এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের অধিকার আদায়ে সর্বাত্মকভাবে গণ- আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
"বিশ্বের যেকোনো দেশের সরকার ধনীদের থেকে গরিবেদের প্রতি বেশি মনযোগী থাকে। গরিবরা যেন সমাজে একটি সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারে তারা সেটি নিশ্চিত করে। এবং এই দায়িত্বটি পালন করাই হলো সরকারের কাজ। বাংলাদেশে এর উল্টোটা করা হয়েছে", অভিযোগের সুরে এ কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই দেশের মানুষ জ্বলছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, "এই সরকার দেশকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কোথাও কথা বলতে পারবেন না, লিখতে পারবেন না, কোথাও যেতে পারবেন না।"
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে দলীয় প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেওয়ায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "সিকিউরিটি টেন্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রশ্নটা হচ্ছে এত টেন্ট তৈরি করে থাকতে হচ্ছে কেনো? বার বার এই কথা বলছেন কেনো? আবার সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে,চক্রান্ত হচ্ছে। তাহলে বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে কী দেশ আপনারা চালালেন? আপনারা বলেন যে সন্ত্রাসবাদকে আপনারা উধাও করে দিয়েছেন। সেখান থেকে আবার এই চিন্তা আসছে কেনো?"
সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, বিশ্ব বাজারের মূল্য অনুযায়ী বাংলাদেশের বাজারে জ্বালানি তেলের যে রিটেইল প্রাইজ, সেখানে সমস্ত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে দাম সমন্বয় করলে তেলের দাম শতকরা ৮ শতাংশ কমতে পারে; ৫১ শতাংশ বাড়তে পারে না।
তাহলে যেটি দাঁড়াচ্ছে সেটি হলো, সরকার অন্যায়ভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নীতিমালা তৈরি করেছে। এখানে জ্বালানি ও বিদ্যুতকে 'রাজনৈতিক পণ্য' বানানো হয়েছে।
"তারা জ্বলানি তেলের দাম বাজার মূল্যে নির্ধারণ না করে রাজনৈতিকভাবে মূল্য নির্ধারণ করেছে। এটি এখন 'রাজনৈতিক পণ্য' হয়ে গেছে", বলেন তিনি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাকির হোসাইন খান প্রমুখ।